স্কুলছাত্র শুভ হত্যা মামলার তদন্ত পিবিআইকে দেওয়ার দাবি মায়ের





আরাফাত হোসেন শুভঅষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আরাফাত হোসেন শুভকে নৃশংসভাবে খুন ও লাশগুমের ঘটনায় দায়ের মামলায় প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন মা খোদেজা বেগম। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে মামলার তদন্ত কার্যক্রম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন অসহায় এই মা।
১৪ বছরের আরাফাত হোসেন শুভ গত ৩১ মার্চ নিখোঁজের পর খুন হয়। তার বাবার নাম ইমাম হোসেন। তাদের বাড়ি ফেনীর সদর উপজেলার দক্ষিণ কাশিমপুর পাঁচগাছিয়া গ্রামে।
সোমবার (৬ মে) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খোদেজা বেগম ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান।
গত ৩১ মার্চ নিখোঁজ হয় শুভ। এর সাত দিন পর শুভর সহপাঠী ইসমাইল হোসেন ইমনের (১৪) স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফেনীর তেমুহনী বাজারে শামসুদ্দিন স্টোর ও ঝর্ণা ইলেকট্রিক দোকানের পেছনে কলাগাছের ঝোঁপ থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত শুভর মা খোদেজা বেগম বলেন, পুলিশ ইমন নামে একজন আসামিকে গ্রেফতার করে এবং তার জবানবন্দি নেয়। এই হত্যাকাণ্ডে প্রেমকুমার, কাঞ্চন ও নাইমুদ্দিনসহ ৮-১০ জন জড়িত ছিল বলেও পুলিশ জানায়। তবে পুলিশ জড়িত আটজনকে আটকের পর ছেড়ে দেয়।
তিনি বলেন, রহস্যজনভাবে শুধু ইমনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে পুলিশ। এতে ইমন একাই শুভকে হত্যা করেছে বলে দাবি করা হয়। তবে পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দির কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খোদেজা বেগম বলেন, সমবয়সী শুভকে গলাকেটে হত্যা করা ইমনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম করা, ঘটনাস্থলে রক্ত পরিষ্কার করা, ছুরি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে আবার বাসায় নিয়ে আলমারিতে রেখে দেওয়া একার পক্ষে অসম্ভব।
তিনি বলেন, পুলিশ জানায়, ইমন কোরবানির গরু কাটার ছুরি দিয়ে শুভর ঘাঢ় কেটে হত্যা করেছে। সে একাই তার পায়ের ওপর চেপে বসেছে এবং হাত-পা ধরে রেখেছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে বলেছে, এক মেয়ে সহপাঠীর ফোন নম্বর না দেওয়া নিয়ে ঝগড়া।
সংবাদ সম্মেলনে খোদেজা বেগম আরও বলেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সী দুই সহপাঠীর মধ্যে সহপাঠী এক মেয়ের মোবাইল নম্বর নিয়ে ঝগড়ার পর হত্যাকাণ্ডের নিখুঁত পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। পকেটে করে কোরবানির গরু কাটার ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়নোও যৌক্তিক নয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত আছে। যাদের পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্তের আওতায় আনছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইমনের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে জনাববন্দি নিয়েছে দাবি করে খোদেজা বেগম বলেন, আমাদের কিছু আত্মীয়-স্বজনের বিরোধ রয়েছে। তারা জমিজমা ও পারিবারিক বিরোধের প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। থানা পুলিশ যেভাবে তদন্ত করছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ কারণেই আমরা এই হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দিয়ে পুনঃতদন্তের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, জেলার এসপিসহ সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত শুভর চাচা ইসমাইল হোসেন, নানী আয়েশা বেগম, ছোট বোন ফাতেমা আক্তার ও ভাই সাইমন হোসেন।

আরও পড়ুন...
ফেনীতে স্কুলছাত্র শুভকে হত্যার দায় স্বীকার সহপাঠীর