বিএসএমএমইউ’র মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

বিএসএমএমইউ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর মেডিক্যাল অফিসার পদে নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয়নি। আন্দোলনরত চাকরি প্রত্যাশীরা চাইছেন, তাদের অন্তত ১০০ জনকে দলীয়ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হোক। অন্যদিকে, উপাচার্য বলছেন, নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার মৌখিক পরীক্ষা হবে এবং ফলের ওপরে ভিত্তি করেই নিয়োগ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার পরে যে রেজাল্ট হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।’

এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে চাকরি প্রত্যাশীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাধারণত  বিএসএমএমইউ-তে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগের যে পরীক্ষাটা হয়, সেখানে দলীয়করণের একটা চেষ্টা থাকে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের অধীনে নিয়োগটাও দলীয়করণ হয়ে যায়। প্রাণ গোপাল দত্ত স্যার যখন ভিসি হন, তখন থেকে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ বন্ধ আছে। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমাদের রেসিডেন্স ডাক্তার বা ডিপ্লোমাধারী যারা আছেন, তারাই চালাতে পারবেন। মেডিক্যাল অফিসারের কোনও প্রয়োজন নেই।’

আমরা ভিসি স্যারকে দিয়ে ২০০ মেডিক্যাল অফিসারের পোস্ট চালু করি। এরমধ্যে ১৮০ জন এমবিবিএস ও ২০ জন ডেন্টাল। এরপর কর্তৃপক্ষ পাঁচ থেকে ছয়বার মেডিক্যাল অফিসারের নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ দিয়েও পরীক্ষা নেয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাটা হলো। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত সবারই একটা স্বপ্ন থাকে। আমরা সবাই রাজনীতি করেছি, আমরা চাচ্ছি ভার্সিটির মেডিক্যাল অফিসার পদে আমাদের লোকজন থাকবে। এটা সবসময় ঘটেছে।

আন্দোলনকারীরা জানান, ২০০ শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন ৮ হাজার ৫৫১ জন। অভিযোগ আছে, রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই অনেকের কাছে ভেরিফিকেশনের জন্য যাওয়া হচ্ছে। এটা আমরা যখন জানলাম, তখন বললাম যে, রেজাল্ট না হয়ে কীভাবে ভেরিফিকেশন হয়। এরপর আমরা বিএমএ স্বাচিপের নেতাদের কাছে আমাদের রোল নম্বর দেই। আমরা পরীক্ষাও ভালো দিয়েছি। আমাদের অনেকেই টিকবে। রেজাল্টে আমরা দেখলাম, আমাদের ভিসি স্যারের ছেলে সুদীপ বড়ুয়া এবং কন্ট্রোলার স্যারের মেয়ের জামাই চান্স পেয়েছে। এরা দুজনেই বেসরকারি মেডিক্যালের স্টুডেন্ট ছিলেন। আমাদের এক বড় ভাইয়ের বয়স ৩৪ প্লাস, আরেক বড় ভাইয়ের বয়স ৩৬, তার রোলও এখানে আছে। এদের মধ্যে একজন বিদ্যুত কুমার সূত্রধর (রোল ৮১১৮০), যার বয়সও বেশি। আমাদের কাছে সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে— এটা দলীয়করণ তো হয়নি, এটা পুরোপুরি স্বজনপ্রীতি হয়েছে। নিজের ছেলেকে টেকানো, কন্ট্রোলার স্যারের মেয়ের জামাইকে টেকানো, এগুলো কীভাবে সম্ভব? আমরা এসব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরতে চাই। যাদের আন্দোলনের কারণে এই মেডিক্যাল অফিসার পদ তৈরি হলো,তাদের দেওয়া হোক। অন্তত একশটা পোস্ট আমরা চেয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, কয়েক দফা পিছিয়ে দেওয়ার পর গত ২২ মার্চ মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ফল প্রকাশিত হয়েছে ১২ মে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ২০০টি  পদের মধ্যে ১৮০ জন এমবিবিএস চিকিৎসক এবং ২০ জন বিডিএস চিকিৎসক নেওয়া হবে।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এমবিবিএস ৭৩৯ জন এবং বিডিএস ৮১ জন। এই ৮২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মেধার ভিত্তিতে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশের পর আন্দোলনে নেমেছেন অনুত্তীর্ণরা। তারা এ পরীক্ষার ফল বাতিলের দাবি জানান। অন্যথায়, আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা।

ছেলের লিখিত পরীক্ষায় টিকে যাওয়া এবং পুরো প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আমি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না,যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত,তাদের সঙ্গে আমি ছিলাম না। যারা খাতা দেখেছেন,তাদের মধ্যেও আমি ছিলাম না। সে  (ছেলে) যদি মেরিটে টিকে থাকে, এজন্য ভাইস চ্যান্সেলর বাবা হওয়া কি তার অপরাধ। এছাড়া, এরআগেই সে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান একবারে পাস করেছে। তার যদি অযোগ্যতা থাকতো তাহলে সে এসব পরীক্ষায় একবারে পাস করলো কীভাবে?’

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সাবেক ভিসি হিসেবে প্রশাসনের কোনও বিষয়ে আমার বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না।’

এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার ডা.এ বি এম আব্দুল হান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে এবং সুন্দরভাবে পরীক্ষা হয়েছে।’