মেরামত কাজের তত্ত্বাবধানে থাকা ভবন মালিকের এক আত্মীয় জানান, বুয়েট ও সিটি করপোরেশনের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ অনুযায়ী ভবনটির মেরামতের কাজ করা হচ্ছে।
রবিবার (২৬ মে) বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, এরইমধ্যে ভবনের নিচ তলা মেরামত শেষে দ্বিতীয় তলায় কাজ চলছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশের দেয়ালে ইটের গাঁথুনি দিচ্ছেন শ্রমিকরা। নিচের পিলারগুলোর বিভিন্ন অংশ ভেঙে নতুন করে প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। এসময় সেখানে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। কর্মরত শ্রমিকরা জানান, তারা শুধু একজন প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন। এর বাইরে তারা কিছুই বলতে পারেননি।
ভবন মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদের আত্মীয় পরিচয়দানকারী রায়হান উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুয়েট ও সিটি করপোরেশন আমাদেরকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা ভবনের সংস্কার কাজ করাচ্ছি। কারণ, ভবনটিতো আমাদের, এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও আমাদের।’
ডিএসসিসি ও বুয়েটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ‘আগামী (প্রতিবেদন প্রকাশের দিন থেকে) ৪৫ দিনের মধ্যে ভবনটির ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) করতে হবে। ডিইএ’র রিপোর্ট অনুযায়ী পরের ১৫০ দিন বা পাঁচ মাসের মধ্যে নতুন করে ভবনটির প্রয়োজনীয় মজবুত (রেট্রোফিটিং) করার কাজ করতে হবে। এ দুই সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না।’
এছাড়া, প্রতিবেদনে ওই ভবনের পাশের বাকি চারটি ভবনের সামনের দিকের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ভেঙে মেরামতের পর ডিএসসিসি ও রাজউকের যথাযথ অনুমোদনের পর ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে।
জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের পর বিশেষজ্ঞ কমিটি ওয়াহেদ ম্যানশনসহ আরও চারটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে কমিটি ওয়াহেদ ম্যানশনের আল্ট্রাসনিক পালস ভ্যালোসিটি (ইউপিভি) ও কার্বোনেশন টেস্ট অব কংক্রিট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই মধ্যে এ দুই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য ৫ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তবে মেরামতের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ভবনের পুড়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোর ওপর। সেগুলোর পলেস্তার তুলে পর্যাপ্ত রড ও সিমেন্ট দিয়ে আরও মোটা করতে হবে। কারণ নিচতলার ৫-৬টি কলাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, মেরামতের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। শুধু প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে এ ধরনের ভবন মেরামত কাজ শেষ করা ঠিক হবে না। জানি না তারা কার মাধ্যমে মেরামত কাজ করছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা ভবন মেরামতের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। আমি এই প্রথম শুনলাম।’
উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩২ মিনিটে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের ওয়াহেদ ম্যানশনসহ আশেপাশের পাঁচটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে দগ্ধ হয়ে নারী ও শিশুসহ মোট ৭১ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪১ জন। এ ঘটনায় নিহত জুম্মন নামে এক ব্যক্তির ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, আসামির তালিকায় অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তি রয়েছেন।