সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ গোদাগাড়ী উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন নুরুন-নাহার-রুবিনা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, ওই বছরই বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের টাকা শিক্ষকদের না দিয়ে টুর্নামেন্ট চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের গোদাগাড়ীর পিরিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. ইসমত জাকিয়া লাইলা লিখিত অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের পর শিক্ষকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন সহকারী শিক্ষা অফিসার। অভিযোগ মতে, এরপর থেকে শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করাসহ তাদের হয়রানি শুরু করেন নুরুন-নাহার-রুবিনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার ওই সময়ের শিক্ষা অফিসার রাখী চক্রবর্তী ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত হলে শিক্ষা অফিসারের চলতি দায়িত্ব পান নুরুন-নাহার-রুবিনা। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষকদের প্রতি ‘প্রতিশোধপরায়ণ’ হয়ে ওঠেন তিনি। শিক্ষকদের ওপর হয়রানি ও তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ বেড়ে গেলে উপজেলার প্রধান শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ জানান।
একাধিক শিক্ষক জানান, এসব ঘটনার মধ্যেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পদোন্নতি পান নুরুন-নাহার-রুবিনা। পদোন্নতির পর হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় পদায়নের আদেশে ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর যোগদান করেন। বাহুবলে যোগদান করে নতুন আদেশে আবার গোদাগাড়ীতে ফেরেন ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি। এরপর বোপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এই ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে উপজেলার সব শিক্ষকের স্বাক্ষর নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন গোদাগাড়ী উপজেলার হরিশংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিয়ার রহমান এবং বিজয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ওই শিক্ষা অফিসারকে বদলির জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের কাছে ডিও দেন। ডিও লেটারে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা অফিসার শিক্ষকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করায় গত বছর ২৫ মে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এবং শিক্ষকরা তার অপসারণ দাবি জানিয়েছেন।’ এরপর গত ১৪ মার্চ প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে ডিও দেন তিনি।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষা অফিসার হিসেবে নুরুন-নাহার-রুবিনা ভ্রমণভাতা উত্তোলন করতে পারেন না। কিন্তু তিনি অফিসার হয়েও সহকারী শিক্ষা অফিসারের ভ্রমণভাতা উত্তোলন করছেন চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিক্ষা অফিসার নুরুন-নাহার-রুবিনার সঙ্গে রবিবার (২ জুন) দুপরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি হাসপাতালে রয়েছি এখন কথা বলতে পারবো না।’ পরে বিকালে আবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের অভিযোগের কোনও কপি আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সুপারিশ করা যেতো। যদি অভিযোগ পাই সেক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তবে মানববন্ধন কর্মসূচির বিষয়ে পাঁচজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।