সদরঘাটের নৈরাজ্য বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরও এই পথের যাত্রীরা রেহাই পাচ্ছেন না। সম্প্রতি এই নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ‘কুলি’ বা ‘পোর্টার’দের কাছে প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে এই পথের যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ, কুলি বা পোর্টারদের সঙ্গে যাত্রীদের লাগেজ-ব্যাগ, বস্তা ও মালামাল নিয়ে প্রায়ই টানাটানির ঘটনা ঘটছে। ১০ টাকার পারিশ্রমিকের জায়গায় কুলি বা পোর্টাররা যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রায় বাক-বিতণ্ডা থেকে শুরু করে হাতাহাতি পর্যন্তও গড়ায়। সব মিলিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীদের কাছে সদরঘাট এখন একটি আতঙ্কের নাম। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় কুলি-পোর্টাররা। আর কর্তৃপক্ষ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে সুন্দরবন লঞ্চের যাত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকবর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুনেছি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউএ) ঘাটের ইজারা প্রথা বাতিল করেছে। তাহলে ঘাটে কুলিদের এই নৈরাজ্য কেন? আমার লাগেজ আমি নিয়ে যাবো, সিস্টেম যদি এমন হয়, তাহলে কুলিরা আমাদের এভাবে জিম্মি করার সাহস পায় কোথায়? এছাড়া, লাগেজ তথা পণ্য বহনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক মজুরি হার নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, সেই মজুরি হারের অতিরিক্ত মজুরি দাবি করার সাহস পায় কোথায়?’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘আমি ওই দায়িত্বে নেই। তারপরও বলবো, যাত্রী চাইলেই কেবল তাদের লাগেজ ‘পোর্টাররা’ লাগেজ সরকার নির্ধারিত হারের মজুরির বিনিময়ে বহন করতে পারবেন। অন্যথায় নয়। এ ক্ষেত্রে জোর করার তো প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ কুলি নিয়োগ দিয়েছে। তারা যাত্রীর লাগেজ বহন করতে পারবেন না। অন্যদিকে, যাত্রীর লাগেজ বহনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ‘পোর্টার’। তারা যাত্রী চাইলেই কেবল তার লাগেজ বহন করতে পারবেন।’’
কুলিদের এই নৈরাজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সদরঘাটের কুলি আশরাফ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব সময় বাণিজ্যিক পণ্য থাকে না। বিশেষ করে সকালের দিকে। লঞ্চ থেকে যাত্রীরা পুরোপুরি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত ডেক থেকে বাণিজ্যিক পণ্য নামানোর সুযোগ থাকে না। লঞ্চ খালি হতে হতে আমরা ২/১টি ট্রিপ মেরে বাড়তি কিছু আয় করি। তাই সকালের দিকে কিছুটা সময় যাত্রীর লাগেজ বহন করি। সেক্ষেত্রে আমরা যাত্রীদের জোর করি, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। যাত্রীরা তাদের লাগেজ বহন করার জন্য অনুমতি দিলেই কেবল তা বহন করি।’
প্রসঙ্গত, সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধে ইজারা প্রথা বাতিলের নির্দেশনা দিয়ে সরকারের গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সদরঘাট থেকে অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করে প্রতিবছর ৩ কোটি টাকা ইজারা না নিয়ে ৩ কোটি মানুষকে সেবা দেওয়াই উত্তম।’
সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় সদরঘাটের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নত হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে যে কোনও ঘটনা ঘটতেই পারে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এখানে অনিয়মের কোনও সুযোগ নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন