ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের ২১ বছর বয়সী সাদিয়া আক্তার ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের তিনতলায়। ফ্লোরে মাদুর পাতা, তাতে পাতলা কাঁথার ওপরে শুয়ে আছেন তিনি। মাথার কাছে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন তার মা, পাশে খেলছে আড়াই বছরের মেয়ে কেয়া। হাতে প্রেসক্রিপশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাদিয়ার দেবর বিল্লাল। অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকের জন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে বিল্লাল বলেন, ‘হাসপাতালে তো আর কোনও রোগী নেই, সবাই ডেঙ্গু রোগী।’
আর সাদিয়া বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছি। তবে জ্বর গত ১৪ দিন আগে থেকে। প্রথম জ্বরের পরই গলির ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাই। জ্বর না কমায় অ্যান্টিবায়োটিক খাই। তাতেও কমেনি। এরপর ঢাকার দুইটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাই, তাতেই ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর থেকেই এখানে।’
সাদিয়া বলেন, ‘বাসার চারপাশের সবার জ্বর হচ্ছে, সবার মনে ডেঙ্গু আতঙ্ক। নিজের কথা না ভেবে এখন ভাবতে হচ্ছে মেয়ের কথা। এত ছোট মেয়ে, যদি ডেঙ্গু হয়, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে!
রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন লাকি আক্তার। গত পাঁচ জুলাই তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ‘কেবল আমি একা নই। আমার দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে রাফি ও চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে তাইয়েবাও ডেঙ্গু আক্রান্ত।’
লাকি আরও বলেন, ‘জ্বর কমেছে কিছুটা। কিন্তু মাথাব্যথা, চোখব্যথা, পুরো শরীরব্যথা আর প্রচণ্ড বমি। একটু ডাবের পানি খেয়েও রাখতে পারতাম না। সব বমি হয়ে যেতো।’
নিজের মুখে হাত বোলাতে বোলাতে লাকি বলেন, ‘মুখ থেকে চামড়া উঠতো, ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়েছে প্রচণ্ড। আমার কখনও কখনও মনে হয়েছে এই অসহ্য যন্ত্রণার চেয়ে মরে গেলেও ভালো হতো। এত কষ্ট হয়েছে, মৃত্যুর যন্ত্রণা কী, সেটা বুঝেছি। এত আতঙ্কিত কখনও হইনি।’
গত মে মাসে ১৮৪ জন রোগী থেকে চলতি মাসের শেষে যখন রোগীর সংখ্যা হয় ৩ হাজার ৫৩২ জন, তখনও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বারবার বলছেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। শনিবার (২০ জুলাই) সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানিয়েছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর অবস্থা উদ্বেগজনক। তবে, মেয়র সাঈদ খোকন ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। তবু, আমাদের আশেপাশের অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভালো অবস্থানে আছি। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে।’
সাঈদ খোকনের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে লাকি আক্তারের স্বামী প্রকৌশলী এসএম মনির হোসেন বলেন, আমার পরিবারের তিন জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। আর মেয়র বলছেন, আতঙ্কিত না হতে। কিন্তু পরিবারের তিন ডেঙ্গু রোগীর অভিভাবক হিসেবে নগরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বলতে চাই, নগর ভবনের বিশাল ওই দালানের ভেতরে থাকলে ডেঙ্গু রোগীর আতঙ্ক বোঝা যাবে না। কেবল বুলি আউড়ালে হবে না, দেখতে হবে মানুষ কেমন আছে।’
এদিকে, ঢামেকের মেডিক্যাল অফিসার রাশেদুল হাসান বলেন, ‘ডেঙ্গু মহামারি চলছে। ঢামেক হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই।’ শুধু ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শিগগিরই জরুরি ভিত্তিতে ২০০ বেডের একটি ইউনিট প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।