বাসের স্টিয়ারিং ছেড়েছেন দিয়ার বাবা



দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলমসড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম নিজেও পেশায় যাত্রীবাহী বাসের চালক ছিলেন। তবে, মেয়েকে হারানোর পর থেকে তিনি আর বাস চালাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেয়ের মৃত্যুর পর বাসে উঠিনি। যে বাসের চাপায় আমার মেয়ে চলে গেলো, সে বাসের স্টিয়ারিং আমি কেমন করে ধরি?’ রবিবার (২৮ জুলাই) নিজ বাসায় এ প্রতিবেদককে তিনি এসব কথা বলেন।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাইয়ে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে দিয়ার বাবা বলেন, ‘যখন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন ওরা তো রাস্তার পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করতেছিল। বাসের ড্রাইভার তো দূর থেকেই দেখতেছিল। তারপরও দুই গাড়ি রেষারেষি করে বেপরোয়াভাবে আসতেছিল। ড্রাইভাররা যদি দক্ষ হতো, তাহলে তারা এই কাজ করতো না। প্রথম যে গাড়ি এসেছে, তাতে রাজীব গিয়ে হ্যান্ডেল ধরে উঠতে চেয়েছিল, এর ভেতরে বাম সাইড দিয়ে পেছনের গাড়িচালক মাসুম বিল্লাহর গাড়ি চলে আসে। তখন তো বাম দিকে জায়গা ছিল না, তখনই রাজীব বাস থেকে পড়ে যায় এবং সেখানেই মারা যায়। আর আমার মেয়েটা দেয়ালের সঙ্গে মিশে যায়। দেয়াল ও গাছসহ পড়ে যায়।’

দিয়া ও রাজীবকথাগুলো বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন জাহাঙ্গীর আলম। বলেন, ‘আহারে আমার মা-টার জানি কত কষ্ট হয়েছে! কত কষ্ট পেয়েছে! কিন্তু আমি ওরে কোনও দিন কোনও কষ্ট দেইনি! আমার টাকা ছিল না, ড্রাইভারি করে তিন ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাইতে ছিলাম। কিন্তু তাদের মনে কোনও দিন কষ্ট দেইনি। আমার মেয়েটা কোনও দিন আমাকে সে কষ্টের কথা বলতেও পারবে না!’

দিয়ার বাবা বলেন, ‘আমি এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার চাই।’ আরও কোনও বাবা যেন তার মেয়েকে না হারায় বলেই তিনি আবারও ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের ঢালের সামনের রাস্তায় জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের প্রতিযোগিতার সময় একটি বাস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম রাজীব মারা যায়। এই ঘটনায় মীমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।