এবার উত্তরবঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এ বছর ঈদুল আজহার সময় সারাদেশে সড়ক পথে গাড়ি চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। এতে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তিনটি সেতু খুলে দেওয়ার কারণে এ পথে যানজট তেমন দেখা যায়নি। সড়ক দুর্ঘটনাও এ পথে তুলনামূলক কম হয়েছে। কিন্তু খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি বরং বেড়েছে।
দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, যানবাহনের সিডিউল বিপর্যয়, অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, মহাসড়কে ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন বা সার্ভিস রোড না থাকা, ঈদ ফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, সড়কের বেহাল দশা, গাড়ি না পেয়ে মোটরসাইকেলের যাত্রা, সড়কে নৈরাজ্য নিয়ম না মানার প্রবণতা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। ট্রাফিক আইন না মানা এবং একের বেশি যাত্রী নেওয়ার কারণে বেশিরভাগ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।
সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে নিসচার প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মনিটরিং শুধু ঈদের আগে করলেই হবে না বরং ঈদ পরবর্তী সময় মনিটরিং করতে হবে। চালক হেলপারসহ পরিবহন শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ও বেতন নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সড়কে দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। কারণ তাদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা তৈরি করা হয়, চালক প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স ইস্যু ও যানবাহনের ফিটনেস প্রদান পদ্ধতি আধুনিকায়ন করতে হবে, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং চালক প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কের গতি নিরাপদ করে দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন, ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে বন্ধের আদেশ শতভাগ কার্যকর এবং সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে ইতোমধ্যে যেসব সুপারিশ প্রণীত হয়েছে সেগুলোর শতভাগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি আরও কিছু পরিকল্পনা তিনি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে, মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানো নামানো, ওভারটেকিং, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালবোঝাই করা গাড়ির ছাদে যাত্রী বহন বন্ধ এবং জেব্রা ক্রসিং থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করার প্রবণতাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দরিদ্র ও বেকার যুবকদের বিনামূল্যে অথবা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিদ্যমান চালকদের মাঝে দক্ষতা বৃদ্ধি ও সচেতনতামূলক নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম চালু অব্যাহত রাখতে হবে। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত এবং যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে ফুটপাত তৈরি করে হাঁটার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া দেশের ৬৬টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সকল শিক্ষক তাদের স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘সরকার এক লাখ দক্ষ প্রশিক্ষিত চালক তৈরি করার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দক্ষ চালক তৈরি করতে হবে। এতে সরকারের যে পরিকল্পনা- প্রতি ঘরে ঘরে একজনের কর্মসংস্থান করে দেওয়া সেটা বাস্তবায়ন হবে। এটাই একমাত্র সেক্টর যেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে কেউ বেকার থাকবে না। তাই, সরকারের প্রতি আহ্বান, আপনারা প্রশিক্ষিত চালক তৈরি করুন। এতে একদিকে যেমন বেকার সমস্যা দূর হবে অন্যদিকে দুর্ঘটনা কমে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপেন, যুগ্ম সম্পাদক বেলায়েত হোসেন নান্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।