মোটরসাইকেল চালককে হত্যার পর মালিবাগে বসে চা খায় নুরউদ্দিন

আটকের পর ঘাতক নুরউদ্দিন অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং চালক মো. মিলনকে হত্যার পর মোটরসাইকেলটি নিয়ে ফ্লাইওভার থেকে নেমে মালিবাগ বাজারে যায় ঘাতক মো. নুরউদ্দিন সুমন। বাজারে বসেই চা খায় সে। এরপর মালিবাগের একটি নির্মাণাধীন ভবনে মোটরসাইকেলটি লুকিয়ে রাখে।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ঘাতক নুরউদ্দিন।

এর আগে, ২৬ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপরে চালক মিলনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই যাত্রীবেশী ঘাতক নুরুউদ্দিন সুমন পলাতক ছিল। ১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে মালিবাগ এলাকা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম নুরুউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। ২ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। এরপর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

জবানবন্দিতে নুরউদ্দিন জানিয়েছে, তার বাড়ি নোয়াখালী। ঢাকায় শাহবাগ থেকে ফুল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতো সে। ২৬ আগস্ট রাত ১টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে যায়। সেখান থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য ৫০ টাকা চুক্তিতে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করে। মোটরসাইকেলটির চালক ছিলেন নিহত মো. মিলন।
মোটরসাইকেলে চড়ে মালিবাগ ফ্লাইওভারে ওঠার পর চালককে সিগারেট ধরানোর কথা বলে থামতে বলে এবং ফ্লাইওভারের ওপর দাঁড়িয়েই দুজন ধূমপান করে। ধূমপান শেষে ঘাতক নুরউদ্দিন চালককে পেছনে বসতে বলে নিজে মোটরসাইকেলটি চালাতে চায়। এতে রাজি হননি চালক মিলন। এরপর তাকে নিয়ে গুলিস্তান যেতেও অস্বীকৃতি জানান মিলন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে নুরউদ্দিন তার পকেটে থাকা অ্যান্টিকাটার দিয়ে মিলনের গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে টান দেয়।
এরপর নুরউদ্দিন তার (মিলনের) মোবাইল ফোনটিও নিয়ে নেয়। আঘাত পাওয়ার পর মিলন মোবাইল ফোন, হেলমেট ও মোটরসাইকেল রেখে গলা চেপে ধরে শান্তিনগরের দিকে নেমে যান।

এরপর মিলনের মোটরসাইকেলটি ঘুরিয়ে ফ্লাইওভারের উল্টোপথ দিয়ে মালিবাগ বাজারে নামে নুরউদ্দিন। বাজারে বসে চা খায় সে। এরপর চায়ের দোকানের সামনে থেকে চলে যায়।

তারপর মালিবাগের ২২২/২ মেট্রো এইমের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের সামনে যায় মিলন। দারোয়ানকে জানায়, কিছু সময়ের জন্য বন্ধুর মোটরসাইকেলটি সেখানে রাখা হবে। পরে বাউন্ডারির ভেতরে খোলা জায়গায় মোটরসাইকেল রেখে হেলমেট ও মোবাইল ফোন নিয়ে বাসায় চলে যায় নুরউদ্দিন।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘এ ঘটনায় নুরউদ্দিন একাই জড়িত। সে ছিনতাই ও চুরির সঙ্গেও জড়িত। তবে থানায় তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা এখনও পাওয়া যায়নি।’

অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং ব্যবসা যেসব প্রতিষ্ঠান করে, তাদের আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত বলেও মনে করেন আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং করা উচিত না। এজন্য চালক ও যাত্রী উভয়ের ঝুঁকি রয়েছে।’