‘ছেলেটাকে লিভার দিয়া বাঁচাইলাম, ডেঙ্গুতে মইরা গেলো’

রোকসানা বেগম ও ডা. সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে সিরাতুল ইসলাম (ফাইল ছবি)‘ছেলেটাকে নিজের লিভার দিয়া বাঁচাইলাম আর এক সামান্য জ্বর ডেঙ্গুতে কিনা ছেলেটা মইরা গেল। এখন আমার আর কিছু বলার নাই, সবাই দোয়া করবেন আমার ছেলেটার জন্য।’ রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) মোবাইল ফোনে এভাবেই বিলাপ করে বললেন ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া সিরাতুল ইসলাম শুভ্রর (২০) মা রোকসানা বেগম। গত জুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল শুভ্রর।

শোকবিহ্বল রোকসানা বেগম ছেলের শেষ বিদায়ের কথা স্মরণ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলেটার জ্বর হইলো। পরীক্ষাতে ডেঙ্গু ধরা পড়লো। খিঁচুনির মতো হইলো। অজ্ঞান ছিল। তারপর ঈদের দিনে ছেলেটাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হইলাম। সেখানে আইসিইউতে ভর্তি করা হইছিল। পুরাটা সময় অজ্ঞান ছিল। তাই কোনও কথা হইতো না। কেবল মাঝে মাঝে গিয়া ছেলেটাকে দেখতাম। ভরসা ছিল, এতো বড় অপারেশন করে এখান থেকে নিয়া গেছি, এবারও নিয়া যামু। কিন্তু পারলাম না, ছেলেটা চলে গেল!’

শুভ্রর মৃত্যু প্রসঙ্গে বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লিভার প্রতিস্থাপনের পর মোটামুটি সুস্থই ছিল শুভ্র। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট ঈদের দিনে ছেলেটাকে কিশোরগঞ্জ থেকে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিনই সে মারা যায়।’

প্রসঙ্গত,  গত ২৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো লিভার প্রতিস্থাপন হয়। সিরাতুল ইসলাম শুভ্রকে লিভার দিয়ে বাঁচিয়ে তোলেন তার মা রোকসানা বেগম। বিএসএমএমইউয়ের হেপাটোবিলিয়ারি ও প্যানক্রিয়েটিক এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ প্রায় ৬০ জন এই কার্যক্রমে অংশ নেন। লিভার প্রতিস্থাপন শেষে গত ১৮ জুলাই মা-ছেলে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে ফিরে যান। ছেলেকে নিজের লিভারের ৬০ শতাংশ দান করেছিলেন মা রোকসানা বেগম।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে মারা গেলেন বিএসএমএমইউ’র প্রথম লিভার প্রতিস্থাপনের রোগী সিরাতুল