ওষুধ কেনায় কেন্দ্রীয় ওষুধ সংরক্ষণাগারের অনিয়ম

সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপো (সিএমএসডি)

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় ওষুধ সংরক্ষণাগারের (সিএমএসডি) বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য চাহিদাপত্র ছাড়াই ওষুধ কেনে। ফলে কোথাও সরবরাহ না করায় ওই ওষুধ গোডাউনে থাকা অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৯৫ লাখ ৬ হাজার ৯৪৪ টাকা। মূলত প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই এই অনিয়ম করা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী এধরনের কেনাকাটার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে চাহিদাপত্র নিতে হয়। এরপর চাহিদার ভিত্তিতে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে হয়। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করেনি সরকারি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ওষুধ সংরক্ষণাগার। সরকারের হিসাব নিরীক্ষায় এই অনিয়ম ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, সরকারের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদফতর ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের (সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপো-সিএমএসডি) ২০১২-১৩ অর্থবছরের কেনাকাটার ওপর হিসাব নিরীক্ষা করে। এতে সংস্থাটির স্টোর সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই অর্থবছরের জিআর ১২০৫-এর লট ১ ও ২-সহ বেশ কয়েকটি প্যাকেজের মাধ্যমে কেনা ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এ বিষয়ে যথাসময়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অডিট অধিফতর কেনাকাটার নথিপত্র যাচাই করে দেখতে পায়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস থেকে এক বছর আগে ওষুধগুলো কেনা হয়। কোনও হাসপাতালের চাহিদাপত্র ছাড়াই এসব ওষুধ কেনা হয়। ফলে ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। অডিট কর্তৃপক্ষ তখন কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে এর ব্যাখ্যাসহ জবাব চেয়েও পায়নি। পরে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানায় অডিট অধিফতর। একই বছরের ২০ মে পুনরায় তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও সাড়া দেয়নি কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ বিষয়ে চিঠি লেখে অডিটরের কার্যালয়। কিন্তু এরপরেও অভিযোগ সম্পর্কে নিষ্পত্তিমূলক কোনও জবাব পায়নি বলে জানিয়েছে অডিট অধিদফতর।

পরে অডিট সুপারিশে এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ ও তাদের কাছ থেকে এক কোটি ৯৫ লাখ ছয় হাজার ৯৪৪ টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে প্রমাণপত্রসহ অডিট অধিদফতরে পাঠাতে বলা হয়।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে গিয়ে উপপরিচালক (ডিডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কালামের সাক্ষাৎ চাওয়া হলে তিনি সাক্ষাৎ দেননি। পরে তার সহকারীর মাধ্যমে জানান, তিনি এ ব্যাপারে মিডিয়ার সঙ্গে কোনও কথা বলবেন না।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে একই মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি বিষয়টি উল্লেখ করে তার মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।