‘সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মাধ্যমেই হলগুলোতে নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব’

প্রতীকী টকশোর আলোচনায় শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ধরে বুয়েটের হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করে আসছে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েও পাওয়া যায়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই হলগুলোতে নির্যাতনকারীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান আবরার। শিক্ষার্থীরা চায় না, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বুয়েটে আর কোনও নির্যাতন চলুক। একমাত্র সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মাধ্যমেই এ নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে বুয়েট ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘প্রতীকী টকশো’র আলোচনায় এসব কথা বলা হয়। এ টকশো সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ।

আলোচনায় বুয়েট শিক্ষার্থী তামজিদ বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক রাজনীতি বন্ধ হোক সেটা চাই। সাধারণত ছাত্র রাজনীতির উপকারিতা দুটি। একটি হলো,  শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির কথা বলা। আমাদের পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিটি ক্লাসে সিআর বা ছাত্র প্রতিনিধি আছে। তারা প্রত্যেকে নির্বাচিত হন। তাদের মাধ্যমে অভিযোগ বা দাবির কথা জানানো যায়। এর জন্য সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই।

‘দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়া। আমাদের এই শিক্ষার জন্য নোংরা রাজনীতির দরকার নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলোতে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নেই তারাও রাজনৈতিক বা সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করছে। অন্যদের পক্ষে সম্ভব হলে আমরা বুয়েট থেকে বের হওয়া ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষেও সম্ভব হবে। তবে কেউ ব্যক্তিগতভাবে যেকোনও রাজনৈতিক দল সমর্থন করতে পারে।’

চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মালিহা বলেন, ‘আমাদের হলগুলোতে চলে আসা র‌্যাগিংকে র‌্যাগিং না বলে টর্চার বলবো। এটা করার পর শেল্টার কোথা থেকে আসে। শিক্ষকসহ প্রভোস্টরা মেনে নিয়েছেন এই টর্চার যারা করে তাদের ক্ষমতা বেশি। এই ক্ষমতা আসে রাজনৈতিক দল থেকে। এজন্য আমরা সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ চাই।’

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় নির্যাতন করা প্রসঙ্গে আলোচক শীর্ষ সংশপ্তক বলেন, ‘র‌্যাগিং আমাদের ক্যাম্পাসে অনেক বড় সমস্যা। এই র‌্যাগিং কারা করে? দেখা যায়, যারা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকে তারাই র‌্যাগিং করে। তারা খুব ভালো করে জানে, এসব করার পর সহজেই পার পাওয়া যায়। বিচারহীনতার রাজনীতির কারণে এগুলো প্রশ্রয় পায়।’

আরেক আলোচক শিহাব হলগুলোতে সিসিটিভি রাখার আবশ্যকতা তুলে ধরে বলেন, ‘বিভিন্ন হলে র‌্যাগিং হওয়ার পর সেগুলোর প্রমাণ থাকে না। সেজন্য ফুটেজ দরকার। একটা খুন হয়ে গেল অনেক দিনের চলমান ঘটনার কারণে। এজন্য সবার নিরাপদ বোধ করার জন্য সিসিটিভি থাকা দরকার।’

এ সময় সঞ্চালক অনিরুদ্ধ আলোচনায় অংশ নেওয়া পাঁচজনের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘সিসিটিভি না থাকার কারণে আপনারা কি নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন?’ জবাবে সবাই হঁ্যা সূচক উত্তর দেন।

টকশোর আলোচনায় আবরার হত্যার প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন সময়ে অন্যদের ওপর নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা দাবি করেন, আলামত সংগ্রহে পুলিশকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। বরং সহযোগিতা করা হয়েছে।

আলোচনায় হত্যাকাণ্ডের পর জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতাকে স্বাগত জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন আবরারের বাবা। ইতোমধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।