গ্রাফিতি যেভাবে আন্দোলনের অংশ

‘জাস্টিস ফর আবরার’ বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেয়ালজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে এই গ্রাফিতিমুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে যেকোনও আন্দোলনে পোস্টার, দেয়াল লিখনের মতো বর্তমান সময়ে গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে আন্দোলনের অন্যতম অনুষঙ্গ। শিল্পীরা বলছেন, দেয়ালে যা কিছু উপস্থাপিত হয়, তা আকর্ষণ করে বেশি, ফলে এটি সবসময়ই ছিল। পশ্চিমা দেশে এর চল বেশি।

2সম্প্রতি বুয়েটের ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে নির্যাতনে নিহত ও গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের মুখ। আবু বকর, এহসান রফিক থেকে আবরার ফাহাদ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার মুখগুলোর ছবি বলে দিচ্ছে কী নিপীড়নের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে।

6বাংলাদেশে গ্রাফিতি শব্দটি নতুন এসেছে। ২০১৭ সালে হঠাৎ ‘সুবোধ’ নামে একটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে গ্রাফিতি পরিচিতি পায়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সামনে ‘শামসুন্নাহার হল নির্যাতন’ উপলক্ষে ছাত্র ইউনিয়নের ড্রাগন গ্রাফিতি, সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনের সময় কিছু বার্তা নিয়ে করা দেয়ালচিত্র, আর হালে নিজেদের আবাসের অধিকার নিয়ে করা গ্রাফিতিসহ একের পর এক গ্রাফিতি দেখা যায়। এগুলোর বেশিরভাগই কারা করছে তার খোঁজ পাওয়া যায় না। গ্রাফিতি কী বলতে গিয়ে শিল্পীরা বলছেন, জনসাধারণের অভিমতকে শিল্পী যখন দেয়ালে হাজির করেন এবং বিশেষ পদ্ধতিতে তা উপস্থাপন করেন, তখন সেটিকে গ্রাফিতি বলে। এর বেশকিছু ধরনও আছে। আর সবসময় যে

4গ্রাফিতি আন্দোলন-বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত হবে, বিষয়টি তেমনও না। তবে এই শিল্পকর্মগুলোর মূল উপজীব্য—সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক ঘটনা। প্রাচীন মিসর, গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যে এর নিদর্শন পাওয়া যায়।

271A3546ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক আকরামুল হক সম্প্রতি নির্যাতনের মুখোমুখি হওয়া শিক্ষার্থীদের চেহারা আঁকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কেন এই উদ্যোগ প্রশ্নে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন নিপীড়নের মধ্যে আছি। ক্যাম্পাস যখন নিপীড়কমুক্ত হচ্ছে, তখন আমরা হয়রানির বিভিন্ন ঘটনাকে স্মরণ করতে চাই। এগুলো মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। দেয়ালচিত্রের ক্ষমতা বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আপনি বড় ক্যানভাসে নতুনত্ব রেখে কিছু

271A3575উপস্থাপন করবেন, তখন সেই বার্তা অনেককে ভাবাবে। ফলে আন্দোলন সময়ে অনেক কর্মসূচির মতোই দেয়ালে অংকনকে আমরা গুরুত্ব দেই।

গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ আমাদের দেশে সবসময়ই ছিল উল্লেখ করে শিল্পী কারু তিতাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেয়ালের শক্তি হলো, চট করে অনেক মানুষের নজর কাড়ে। যেকোনও বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি উপস্থাপনার মধ্যেই কিছু প্রশ্ন রেখে দেওয়া যায়, তাহলে তা আলোচনা তৈরি করে এবং আলোচনা জারি থাকাটাই সার্থকতার দিকে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘একাত্তরে কামরুল হাসান থেকে শুরু করে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন ও সম্প্রতি পরপর বেশকিছু আন্দোলনে এর দেখা

3

মেলে। আমরা চাইলেই এটির মাধ্যমে সহজে মানুষের কাছে মানুষেরই চাওয়া নিয়ে হাজির হতে পারি।’

দেয়ালচিত্রেরই একটা ধরন হলো গ্রাফিতি। তবে পরিসর বড়। আমাদের এখানে যেটি হয় আন্দোলনের সময় সেটি একধরনের পোস্টার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সহিদ কাজী। তিনি বাংলা

7ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেয়ালে যা কিছু লিখবেন বা আঁকবেন এর ব্যাপকতা বেশি। এটি একধরনের স্থায়ী প্রতিবাদ। উপস্থাপনের ভিন্নতার কারণে অনেক মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে পারে।’

8

তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশে অনেক আগে থেকে এধরনের উপস্থাপনা দেখা যায়। আমাদের দেশে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিবাদের যে পোস্টার ও কার্টুন, সেখান থেকেই শুরু। এরপর প্রতিটি আন্দোলনে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে সামনে এসেছে গ্রাফিতির এই ধরন।