প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, ওইদিন রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক অভিযানে সংস্থাটির অ্যানেক্স ভবনের ৫১৪ নম্বর কক্ষ থেকে রাজউকের বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের ৭১টি প্লটের নথি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সিল, অখণ্ড ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার এমএ কাইয়ুমের প্রত্যয়নপত্রের দুটি বই এবং কয়েকটি পর্ন সিডির পাশাপাশি এমএ কাউয়ুম নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন কার্লোস ট্রেড লিমিটেডের তিনটি ট্রেড লাইসেন্স উদ্ধার করা হয়। এছাড়া অভিযানে ওই কক্ষে পারভেজ নামে রাজউকের একজন কর্মচারীকে পাওয়া যায়। তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত জবানবন্দি দেন। এ সময় পারভেজ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, অফিসটি সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুম ও গোল্ডেন মনির নামে অপর এক ব্যক্তির ছিল। তাদের লোকজন এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
বর্ণিত অবস্থায় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুমের প্রত্যয়নপত্র এবং একই নামে ট্রেড লাইসেন্স বই পাওয়া যাওয়া ব্যক্তিই অখণ্ড ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার। তিনি তৎকালীন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তাছাড়া প্রকল্প এলাকাটিও ওই কমিশনারের এলাকায় অবস্থিত। প্রকাশিত সংবাদটি রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এমন প্রতিবেদন পরদিন দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে বিএনপির বক্তব্য
বিষয়টি নিয়ে পরদিন ১৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক এবিএমএ রাজ্জাক সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রকাশিত সংবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুমকে জড়িয়ে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসাবধানতাবশত করা হয়েছে। ওই সংবাদে বর্ণিত কার্লোস ট্রেড লিমিটেডের লাইসেন্সে প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসেবে যে এমএ কাইয়ুমের নাম আছে তার সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুমের কোনও সম্পর্ক নেই। ট্রেড লাইসেন্সের ছবিটিই এর প্রমাণ। এমএ কাইয়ুম নামে অন্য একজনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুমকে জড়িয়ে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা মোটেই সমোচীন নয়। এতে এমএ কাইয়ুমের ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা মনে করি, সংবাদটি অসাবধানতাবশত প্রকাশিত হয়েছে যার সঙ্গে এমএ কাইয়ুমের বাবা-মায়ের নাম ও ছবির কোনও মিল নেই।’
প্রতিবেদকের ব্যাখ্যা
পরে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে বিষয়টি যাচাই করা হয়। দেখা গেছে, সংবাদে প্রকাশিত অভিযানে উদ্ধার হওয়া যে ট্রেড লাইসেন্সটির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেই ট্রেড লাইসেন্সটি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুমের নয়। প্রকাশিত সংবাদটি রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তবে ওই কার্যালয় থেকে উদ্ধার হওয়া সাবেক ওই কমিশনার ও বর্তমান বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুমের যেসব প্রত্যয়নপত্রের বই ও সিল উদ্ধার করা হয়েছে সে বিষয়ে পাঠানো বক্তব্যে কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি বিএনপি। তাছাড়া ওই সংবাদ প্রকাশের আগে সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুমের সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: সাবেক কমিশনারের অফিস থেকে বাড্ডা প্রকল্পের ৭১টি নথি উদ্ধার