বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই আজহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল

এটিএম আজহারুল ইসলাম

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২, ৩ এবং ৪ নম্বর অভিযোগে আজহারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আর অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ সংক্রান্ত ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর জেল ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া এক নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল।

পরে আজহারুল ইসলাম খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল  করেন।

ওই আপিলের ওপর বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রায় ঘোষণা করেন চার সদস্যের আপিল আদালত। আপিলের রায়ে বিচারপতিরা সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২, ৩ এবং ৪ নম্বর অভিযোগে আজহারের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ডও বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

আজহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো ৬টি। এগুলো হলো—

প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও রংপুর শহরের বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরণ করে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এরপর ৩ এপ্রিল রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে তারেদরকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, আসামি একাত্তরের ১৬ এপ্রিল তার নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপাড়ায় ১৫ জন নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করে তাদের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, আসামি একই বছরের ১৭ এপ্রিল নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিল এলাকায় ১২শ’র বেশি নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে হত্যা করে এবং তাদের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১৭ এপ্রিল কারমাইকেল কলেজের ৪ জন অধ্যাপক ও এক জন অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারীদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালান। একইসঙ্গে নারীসহ নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের অপহরণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই আসামি।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে একজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন ও গুরুতর জখম করেন।

আরও পড়ুন:

আজহারের মৃত্যুদণ্ড আপিলেও বহাল

আজহারের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ: খন্দকার মাহবুব