গুলশান আরার স্বামী রাজ্জাক আজ রবিবার সকালে এই হাসপাতালে মারা গেছেন। তার সঙ্গে সকালে আরও মারা যান ২০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া মুস্তাকিম (২২) ও আবু সাঈদ (১৮)। গুলশান আরার দেবর আলম মারা যান অগ্নিকাণ্ডের দিন রাতেই। মারা গেছেন অপরিচিত জনও। তার হাসপাতালে আনা চার জনের মধ্যে এখন বেঁচে আছেন কেবল ফিরোজ।
গুলশান আরা বলেন, ‘১৫-১৬ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে সংসার করছি। হাতেগোনা কয়েকদিন তার সঙ্গে আমার কথাকাটাকাটি হয়েছে। চারপাশে অশান্তি থাকলেও আমাদের পরিবারে শান্তি ছিল।’ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘অসময়ে সে চলে যাবে বলেই হয়তো আমার সংসারটা সুখের ছিল।’
স্বামী হারানো এই নারী বলেন, ‘স্বামী রাজ্জাক আগে জুতার ব্যবসা করতেন। তাতে লোকসান হওয়ায় বাড়ির পাশের এই কারখানায় ৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন তিনি। এতেও সুবিধা করে উঠতে না পারায় আগামী জানুয়ারিতে আবারও জুতার ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা ছিল তার।’
তিনি বলেন, ‘স্বামীসহ চার জনকে সিএনজিতে হাসপাতালে এনেছিলাম। এদের মধ্যে এখন শুধু ফিরোজ ভাই বেঁচে আছেন। তার সুস্থতার অপেক্ষায় আছি। তাকে অন্তত ফিরিয়ে নিয়ে যেতে না পারলে নিজেকে কী দিয়ে বুঝ দেবো’
এদিকে, আজ সকালেই মারা যাওয়া মুস্তাকিমের বাড়ি রাজশাহীতে। বাবা নেই, মা গৃহকর্মীর কাজ করেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট এই ছেলেটাই ছিল মায়ের অন্ধের ষষ্ঠী। মা বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঢাকায় আসি। ছেলেটার বন্ধু বলেছে—সে সারাক্ষণ মা মা করছে। অথচ আমি এসে যখন তাকে দেখতে গেলাম তখন সে আর মা বলে ডাকলো না।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সামনে ১২ ডিসেম্বর থেকেই স্বজনদের ভিড়। তাদের দিন কাটছে ভেতর থেকে ডাক শোনার অপেক্ষায়। ডাক শুনে কেউ গিয়ে রোগীকে একবার দেখা আসছেন, আবার কেউ পাচ্ছেন মৃত্যু সংবাদ।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে এখন চিকিৎসাধীন আছেন ছয় জন, আর ঢামেক বার্ন ইউনিটে আছেন আট জন। তবে ঢামেক হাসপাতালে যারা আছেন তাদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো বলে জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে একজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান আরও ১৬ জন।