নির্বাচনের তারিখ বদলানোর দাবিতে হাইকোর্টে একটি আবেদনও হয়েছিল। তবে সেটি খারিজ হয়ে যায়। রিটকারী আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন।
ভোটের তারিখ পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন,‘সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকবে না। তবে তারিখ এগিয়ে বা পিছিয়ে নেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের। আশা করি, নির্বাচন কমিশন আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছাবে।
ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনও। শুক্রবার নগরীর শনির আখড়া এলাকায় প্রচারণাকালে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবি মেনে নেওয়া উচিত। পূজার দিন ভোট না দিয়ে একদিন হলেও এগিয়ে বা পিছিয়ে দেওয়া উচিত। ভোট ঘোষণার আগেও এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশন কেন ওইদিন ভোট ঘোষণা করলো, তা আমার বোধগম্য নয়।’
সরস্বতী পূজার জন্য ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে সহমত পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। তাই, তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্তও ইসির নেওয়ার জরুরি।’
সরস্বতী পূজা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন একই দিনে হওয়ায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে তারা জানায়, ভোট অন্য কোনও দিন হলে তারা অংশ নেবে। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংগঠনের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে।
এর আগে বৃহস্পতিবার পূজার দিনে ভোট নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ আওয়ামী লীগের এমপি পঙ্কজ দেবনাথ। সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সরস্বতী পূজার দিন ভোটের তারিখ রাখা একটি ষড়যন্ত্র। কারণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় (আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক) ভোট দেয়। তাদের ভোটের দিন পূজায় ব্যস্ত রাখা হবে।’
পঙ্কজ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশ অথবা আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে ভোটের তারিখ পরিবর্তন করা যেতে পারে।’
পূজার দিনে ভোটের বিরোধিতা করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনও। গত বুধবার তিনি বলেন, ‘স্বরস্বতী পূজার দিনে এটা করা সরকারের একটা অন্যায় কাজ হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা, এটা অতীতে কোনোদিন হয়নি। ‘ঈদের দিনের যদি নির্বাচন হয়, পূজার দিন যদি এটা হয় তাহলে এটা সরকারের একদম গাফিলতি এবং ব্যর্থতা।’
পূজার দিনে ভোট দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে মন্তব্য করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। চরমোনাই পীরের নেতৃত্ত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হাছিবুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল করীম আকরাম এ মন্তব্য করেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার দাবি জানায়।