আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখছেন না নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা, ইসির তথ্য ভিন্ন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২০

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা দেখছেন না নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, নির্বাচনি পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু আছে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। তারা আচরণ বিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারণায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন।

রবিবার নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা উত্তর সিটির আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব আলোচনা উঠে আসে। ওই সভায় নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন।

ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, ভোটের দায়িত্ব পালনে আনসার পাঁচ হাজার শর্টগান প্রস্তুত রাখছে। ওই সভায় কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট পোস্টারের আকার, বাসাবাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করলে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা চান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, বৈঠকে আনসারের ঢাকা জেলা কমান্ড্যান্ট আফজাল হোসেন বলেন, দুই সিটির প্রায় আড়াই হাজার ভোটকেন্দ্রে আনসার ও ভিডিপি নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন। এজন্য ৫ হাজার শর্টগান প্রস্তুত করা হচ্ছে।

র‌্যাব-১ এর প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে র‌্যাব। এখন পর্যন্ত বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

ডিএমপির ডিসি অপারেশন্স প্রবীর কুমার রায় বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনি প্রচারণা চলছে। পুলিশকে যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তা তারা যথাযথভাবে পালন করবেন।

বিজিবির মেজর করিম বলেন, মানসিকভাবে বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। নির্দেশনা পেলেই ভোটের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে।

সভায় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তারা প্রায় একই ধরনের বক্তব্য রাখেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো। আশা করি ভোটের দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় একজনকে জরিমানা করা হয়েছে।

ম্যাজিস্ট্রেট জাবেদ সরকার বলেন, কিছু পোস্টারের আকার বড়। সেগুলো ব্যানার নাকি পোস্টার তা বোঝা যাচ্ছে না। কিছু এলাকায় ছোট ছোট ঘরকে নির্বাচনি ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি তারা ব্যবহার করতে পারেন কিনা এ বিষয়েও জানতে চান তিনি।

মিরপুর মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা অবাধে প্রচার চালাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনও সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু আছে।

তবে ভিন্ন কথা বলেন ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদির। তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে একেকটা এলাকায় একাধিক নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে ভোট চাইছে। ভোর থেকেই মাইকিং শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার চলছে। এমনকি মসজিদেও ভোট চাওয়া হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটির সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান বলেন, মাইক ব্যবহারে প্রার্থীরা আচরণবিধি মানছেন না। আচরণবিধি প্রতিপালন হচ্ছে না। আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বলেন, আমরা যদি নির্বাচনি আচরণবিধি মানাতে পারি, তাহলে সুষ্ঠু ভোট উপহার দিতে পারবো। সবাই বলছেন এখন পর্যন্ত নির্বাচনি পরিবেশ ভালো আছে। এটা আমাদের জন্য একটি ভালো দিক। আর বাকি যে কয়টা দিন বাকি আছে, এসময়ে আচরণবিধি প্রতিপালন হলে নির্বাচন ৯৯ ভাগ সুষ্ঠু হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ব্যর্থতাই আমাদের ব্যর্থতা। আপনাদের ব্যর্থতা সম্পূর্ণভাবে আমাদের ওপর দিয়ে যায়। কমিশনকেই অভিযুক্ত করা হয়। আপনাদের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আচরণ বিধিমালা প্রয়োগ করার জন্য শাস্তি, জরিমানা করার চাইতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদের অবস্থান দৃশ্যমান করতে পারলে ৫০ শতাংশ আচরণবিধি প্রতিপালনের কাজ হয়ে যাবে। তারপরও কিছু লোক আচরণবিধি ভঙ্গ করবে। আর তাদেরকে নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা দিয়েই শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।