কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহীদের প্রতি নমনীয় আ. লীগ!

c5f6bf0bfa66ff14486af63707587e81-5e286c9a5fc0e

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমর্থনের বাইরে গিয়ে যেসব নেতাকর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্দেশ মানা না হলে তাদের শাস্তি দেয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। তারপরও এ নির্দেশ মানেননি অনেকেই। দলীয় নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষেত্রবিশেষে দলীয় সমর্থন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের কোণঠাসা করে ফেলেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

খবর নিয়ে জানা যায়, দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন অন্তত ১১৫ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ৭২ জন। ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতে আছেন ৩৯ জন বিদ্রোহী। সে হিসেবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৭৭টিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হতে পারে ভোটের দিন। এই বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকায় যেমন রয়েছেন এমপিপুত্র, তেমনই আছেন দলের দায়িত্বশীল পদধারী ব্যক্তিও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন আর তেমন কিছু করার নেই। আমাদের মূল লক্ষ্য মেয়রকে জেতানো। দল সমর্থিত এবং বিদ্রোহী উভয় প্রার্থীই যার যার জায়গা থেকে মেয়র প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন। বিদ্রোহীদের শাস্তি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটারও আর সময় নেই।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বার বার কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরেও এসব ব্যক্তি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। বিদ্রোহীদের প্রথমে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। এরপর 'বুঝিয়ে-শুনিয়ে' সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বিদ্রোহীদের সবার সঙ্গেই কথা বলেছে। তাতে কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও অনেকেই তা মানেননি। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করে, দলের বড় নেতাদের সঙ্গে কারও কারও সুসম্পর্ক থাকায় বিদ্রোহীরা দলীয় নির্দেশনা অগ্রাহ্য করছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেকেই দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এখন বিদ্রোহীদের উপেক্ষা করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাদের কারও পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেই। আর যেহেতু মেয়র পদে বিজয়ী হওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য তাই মেয়রের প্রচারণায় মনোযোগ বেশি দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সিটি নির্বাচনের শুরুতে আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও গত ৯ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে অন্তত দুইশ জন প্রার্থিতা তুলে নেন। এবারই প্রথম কাউন্সিলর পদে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ।

গত শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকরা বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় বিদ্রোহীদের বিষয়টা আওয়ামী লীগের ‘ইন্টারনাল ম্যাটার’। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি বা না পারি, বিষয়টা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আছি ২০০৯ সাল থেকে টানা ১১ বছর। ফলে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী এই বিষয়গুলো থাকবেই। এত বড় দলের মধ্যে এসব সমস্যা থাকবেই। ‘বিদ্রোহের জন্য আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এমন তো না। বিএনপিকে কি প্রশ্ন করেন তাদের বিদ্রোহী আছে?’

এদিকে এখনও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তারা কিছুতেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলে দাবি করছেন। এমন একজন হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম। তিনি উত্তরের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি নির্বাচনি প্রচারণার একটি সভায় জনসাধারণের সামনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার নাম উল্লেখ করে বলেছেন, আমাকে কেন্দ্রীয় ওই নেতা বলেছেন নির্বাচন করতে। এলাকার জনসাধারণ চায় আমি নির্বাচন করি। আমিও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেই নির্বাচন করছি। অন্যদিকে, রাজধানীর উত্তরের আওয়ামী লীগের এক এমপি দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিএনপির এক প্রার্থীর (ভাতিজার) পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ আছে। তিনি ঢাকা  মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির শীর্ষ দুই পদের একটিতে ছিলেন। গত রবিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত এক কাউন্সিলর প্রা্র্থী সফউদ্দিন মোল্লা অভিযোগ করেন, তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমান নাইম ও তার কর্মীরা। তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাইম কিছু বলতে রাজি হননি।

অন্যদিকে, ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমও এবার ডিএসসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থী। এ ওয়ার্ডে এক সময় হাজি সেলিম কমিশনার ছিলেন। এবার ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসান তিল্লু, যিনি হাজি সেলিমের ভাগিনা।

আবার, ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ও নানা অভিযোগে অপসারিত ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে  এবার একই ওয়ার্ডে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পেছনেও এক মন্ত্রীর ‘মদত’ রয়েছে বলে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন।