সেই ফ র সিদ্দিকের বই প্রকাশে আগ্রহী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান

বইমেলায় নিজের বই হাতে ফ র সিদ্দিক

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফ.র. আল সিদ্দিকের বই ‘বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা’  প্রকাশ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায়  বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন লেখক নিজেই।

গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি ঘুরছে। সেখানে দেখা যায় একজন বয়স্ক লোক কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বইমেলার একটি স্টলের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি নিজের বই ফটোকপি করে বিক্রি করেন বলে দোকানিদের জানান এবং বইটি রাখার অনুরোধ করেন। তার এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তার বই কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বইটি কোথায় পাওয়া যাবে তা  জানতে চান ফেসবুকে। 

জানা যায়, বইমেলার পুঁথিনিলয় প্রকাশনার স্টলে লেখক চারটি বই রেখে যান বিক্রির জন্য। সেখান থেকে তিনটি বই গতকালই বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল।

উল্লেখ্য, ফ. র. আল সিদ্দিকের বইটি ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশ করে পরমা প্রকাশন। তবে বইটি পুনর্মুদ্রণে আর আগ্রহ দেখায়নি প্রকাশনা সংস্থাটি। এরপর বইটি নতুন করে প্রকাশের জন্য আরও কিছু প্রকাশনীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন লেখক। কিন্তু, কেউ রাজি হয়নি।  
বিষয়টি অবগত হয়ে পুঁথিনীলয় প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘তার বই একটি রেখে দিয়েছি। আমি লেখকের সঙ্গে আলাপ করবো বইটি প্রকাশের বিষয়ে।’

এরপর ফ র সিদ্দিকের কাছে পুঁথিনীলয় প্রকাশনী ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বই প্রকাশ করার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন লেখকের সহকারী সালাউদ্দিন আহমেদ। সালাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুঁথিনিলয়, বাংলা প্রকাশ, স্বপ্ন , রকমারিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি।

এদিকে মেলা প্রাঙ্গণে ফ র সিদ্দিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার বই কেউ ছাপাতে চায় না। তাই নিজেই বই ফটোকপি করে বিক্রি করি। ১০০ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। আরও ২০০ কপি নিয়ে আসবো। তাছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে বই প্রকাশ করার জন্য। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবো।

তিনি বলেন, আগে টুকটুক করে একটি দুটি বিক্রি করতাম। এখন দেখি আস্তে আস্তে বাড়ছে। গত বছর বেশ বেড়েছে। এবার ভীষণ সাড়া পড়েছে।

কেন নিজে ফটোকপি করে বই বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বই কেউ ছাপাতে চায় না। অন্যরকম লেখা তো...।

এদিকে পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উনার বইটি আমরা প্রকাশের আগ্রহ জানিয়েছি। তাছাড়া আরও কয়েক জায়গা থেকে উনি অফার পেয়েছেন। এখন উনার সিদ্ধান্ত উনি কোথায় ছাপাতে দেবেন।

ডা. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিক জন্মেছিলেন ১৯৩৪ সালে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার চরমধুচারিয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স করেন।  এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ইরানের তেহরান নিউক্লীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট এমএসসি গবেষণা করেন। সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল নিউক্লীয় ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন।

দেশে ফিরে এসে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধীনে অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সামিনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে নিউক্লীয় শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর দীর্ঘদিন গবেষণা করেন। ১৯৯২ সালে ওই সংস্থার নিউক্লীয় বিজ্ঞান ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে অবসর নেন তিনি।