প্রতি ১১ মিনিটে মাদকের একটি নমুনা পরীক্ষা!

গত ২৫ মাসে মাদকের ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। (ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)দেশজুড়ে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পর এর প্রভাব পড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নমুনা পরীক্ষাগারে। গত দুই বছরে গড়ে প্রতি ১১ মিনিটে একটি করে মাদকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এ পরীক্ষাগারে। অতীতে এখানকার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে কমবেশি প্রশ্ন উঠলেও বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পর কোনও পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ হয়নি। পরীক্ষাগারের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িতে ফল নিয়ে জালিয়াতি করার সুযোগ নেই।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার গেন্ডারিয়ায় কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ২০১৮ সালে ৬০ হাজার, ২০১৯ সালে ৬৪ হাজার এবং এ বছরের প্রথম মাসে ৪ হাজার ৫০০ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান পরীক্ষাগারের ৬ জন কর্মকর্তা গত ২৫ মাসে তাদের কর্মঘণ্টায় প্রতি ১১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে একটি করে নমুনা পরীক্ষা করেছেন।
অতীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে মাদকদ্রব্যের পরীক্ষাগারে মাদকের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি হলেও মাদক অভিযানের পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। গত আড়াই বছর ধরে সব নমুনা পরীক্ষায় ফল পজিটিভ হয়েছে। এর কারণ হিসেবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসয়নিক কর্মকর্তা ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের মহাপরিচালক এবিষয়ে খুব কড়া। এখন নমুনা পরীক্ষা নিয়ে কোনও ত্রুটি নেই। কোনোটি নেগেটিভ হলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ডেকে পুনরায় নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। জালিয়াতির সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট উন্নত হয়েছে। মাদক শনাক্তের জন্য কোরিয়া সরকারের সহযোগিতায় অত্যাধুনিক মেশিন পেয়েছে অধিদফতর। এর সাহায্যে দ্রুত মাদক শনাক্ত করা যায়। এটি বিশ্বের সর্বাধুনিক মাদক শনাক্তকারী মেশিন। অপরিচিত মাদকদ্রব্য শনাক্তে সক্ষম এ মেশিনটি হাতের স্পর্শ এবং মানুষের উপস্থিতি ছাড়াই কাজ করতে পারে। বিদ্যুৎ ছাড়াও অটো জেনারেটর সংযুক্ত করায় যন্ত্রটি ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিতে পারে। উন্নত কেমিক্যাল ও মেশিনও রয়েছে পরীক্ষাগারে।’
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ২৫ মাসে সরকারি ছুটি বাদে ৫০১ কর্মদিবসের ২৪ হাজার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অধিদফতরের পরীক্ষাগারে ৬ জন রাসায়নিক কর্মকর্তা গড়ে প্রতিদিন ১১.২৩ মিনিটে একটি করে মাদকের নমুনা পরীক্ষা করেছেন। এ অনুযায়ী নমুনার সংখ্যা ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০টি।
প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল সাহা বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষাগার আধুনিক। একটি মাদকের নমুনা পরীক্ষা করতে আমাদের গড়ে ৩ মিনিট লাগে। তবে অজানা মাদক পরীক্ষা করতে একটু সময় লাগে। এই অল্প সময়ের পরীক্ষাতেই মাদকের সঠিক ফল পাওয়া যায়।’
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে খিলক্ষেত, ক্যান্টনমেন্ট ও নিউমার্কেট থানার ৩টি এবং ২০১৫ সালে একটি হিরোইন মামলার জাল রাসায়নিক প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তখন এ বিষয়ে তদন্ত হলেও দোষীদের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।