কোভিড-১৯ সন্দেহ নিয়ে বাড়াবাড়ি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করছে: আইইডিসিআর

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

নতুন করোনা ভাইরাস ( কোভিড-১৯ ) নিয়ে সন্দেহের নামে কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করছেন। তাদের এ বাড়াবাড়ি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ  ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ( আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

শনিবার ( ২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ  ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা দেখছি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অতি উৎসাহী লোকজনের বাড়াবাড়ি বিভিন্ন কার্যক্রমে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিদেশি নাগরিকদের বাড়িওয়ালারা বাসা ভাড়া দিচ্ছেন না, এমন অভিযোগও আমাদের কাছে আসছে। একজন চীনা নাগরিক তার ভাড়া করা বাসায় উঠতে গেলে তাকে সেখানে উঠতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি একটি হোটেলে রাত কাটিয়েছেন। যদিও তিনি করোনাতে আক্রান্ত নন, কিন্তু যদি হতেন তাহলে তার কাছ থেকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়তো।

এ ধরনের কাজ পুরো দেশকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ ধরনের হেনস্তার কারণে আক্রান্ত কেউ হলে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই, সবাইকে এ বিষয়টি মাথায় রাখার অনুরোধ করছি। যদিও আমরা বারবার বলছি, চীন থেকে এলেই কেউ করোনা আক্রান্ত হবেন না।

তিনি বলেন, একটি স্থলবন্দরে একজন সরকারি কর্মকর্তা ( কাস্টমস কমিশনার) একজন মানুষের অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য কোনও রকম যাচাই না করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলেন এবং তাকে আক্রান্ত বলে দিলেন। অথচ ওই ব্যক্তি আক্রান্ত ছিলেন না। আমরা বার বার জোর দিচ্ছি কাউকে শনাক্ত করা যায় এমন তথ্য প্রচার না করার জন্য। অথচ ওই সরকারি কর্মকর্তা যেটা করেছেন তা শুধু আমাদের বিব্রত করেনি, সেই মানুষটিকেও সামাজিকভাবে হেয় করার বা হেনস্তা করার মতো একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের বাড়াবাড়ি যেমন নাগরিকদের বিব্রত করে তেমনি আমাদের কর্মসূচিকেও কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত করে। তাই সবার কাছে সংবেদনশীল আচরণ কামনা করছি। আমরা সবাইকে বলছি, আমরা সচেতন হবো কিন্তু আতঙ্ক তৈরি করবো না।

এসময় কোনও তথ্য জানার বা জানানোর থাকলে আইইডিসিআরের হট লাইনে যোগাযোগ করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৭৬ হাজার ৭৬৯ জন, এর মধ্যে চীনে রয়েছেন ৭৫ হাজার ৫৬৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী সেখানে যোগ হয়েছেন ৮৯৪ জন। মারা গেছেন দুই হাজার ২৩৯ জন।

চীনের বাইরে আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ২৬টি, এর মধ্যে নতুন করে ইরানে কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন।

সিঙ্গাপুরে গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন কোনও রোগী আক্রান্ত হননি। দেশটিতে নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৮৫ জন। এর মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশি, তাদের একজন আইসিইউতে আছেন, বাকিরা আইসোলেশনে আছেন। আর চীনের পর সিঙ্গাপুরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল। তবে চীনের পরে এখন দক্ষিণ কোরিয়াতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। তার পরে রয়েছে জাপান। আমরা এ দুটো দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

তিনি জানান, এর পাশাপাশি আবুধাবিতে ১১ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি কোভিড-১৯ এর রোগী বলে শনাক্ত হয়েছেন, তার বয়স ৪১ বছর। তিনি ১৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে যান, নমুন সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি তার শরীরে করোনার উপস্থিতি রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়। তার চীন ভ্রমণের ইতিহাস না থাকলেও জানা গেছে, চীনে গিয়েছেন এমন মানুষের সংস্পর্শে ছিলেন তিনি। তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং আইসোলেশনে আছেন।

আইইডিসিআরে এখন পর্যন্ত ৭৭টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে।  তবে এখন পর্যন্ত এই ৭৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলেও জানান অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।