শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং বা বুলিংকারীদের বিরুদ্ধে মামলার বিধান





সুপ্রিম কোর্টদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গুরুতর অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিধান সংবলিত বুলিং (নির্যাতন) নীতিমালার খসড়া হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। তবে বুলিং ছাড়াও ওই নীতিমালায় উত্ত্যক্তের পাশাপাশি র‌্যাগিং শব্দটি যোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ খসড়া নীতিমালা দাখিল করা হয়। আগামী ৫ মার্চ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার প্রতিবেদনটি দাখিল করেন।

ওই খসড়া নীতিমালায় ক্ষতি করার লক্ষ্যে একজনকে বারবার বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো, আক্রমণ করা এবং ইচ্ছাকৃত ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক শিক্ষার্থীর দ্বারা অন্য কোনও শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদের ওপর হিংসাত্মক আচরণকে বুলিং হিসেবে অভিহিত করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বুলিং হলো এক ধরনের মৌখিক, মানসিক বা শারীরিক পীড়ন। মৌখিক, শারীরিক, সামাজিক, সাইবার ও বর্ণগতসহ মোট পাঁচভাবে বুলিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বুলিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে—যেন সে নিজের মধ্যে গুটিয়ে না যায়, কিংবা কোনও ক্ষয়ক্ষতির চিন্তা না করে। এছাড়া, যেসব শিক্ষার্থী বুলিং করে তাদের যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে সংবেদনশীলতার শিক্ষা দেওয়া দরকার। তারা এমন সব কর্মপন্থা অবলম্বন করবে, যেন শিক্ষার্থীদের বুলিং আচরণগুলো হ্রাস করে সেগুলোকে ইতিবাচক প্রো-সোশ্যাল আচরণে রূপান্তরিত করা যায়। বুলিংকারী এবং ভিকটিম উভয়ের মা-বাবা, অভিভাবককে যথাযথ পরামর্শ, গাইডলাইন এবং কাউন্সেলিং দেওয়া দরকার, যেন তারা নিজেদের এবং তাদের সন্তানের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে অরিত্রির আত্মহত্যার প্রকাশিত খবর সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী নজরে আনার পর ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
ওই সময় আদালতের আদেশের পর ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে অতিরিক্ত শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন আদালত। এক মাসের মধ্যে এই কমিটিকে দুটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। একটি হচ্ছে, জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে একটি এবং অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানের আরেকটি প্রতিবেদন।’
এছাড়াও ২০১৯ সালের ১০ জুলাই শিশু নির্যাতন রোধে তাদের অভিযোগ শোনার জন্য দেশের প্রতিটি স্কুলে অভিযোগ বক্স স্থাপনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, প্রতিটি স্কুলে শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগ শোনার জন্য একটি অভিযোগ বক্স খুলতে হবে। শিশুরা তাদের নির্যাতনের অভিযোগগুলো মা-বাবা অথবা স্কুলের শিক্ষক, কারও কাছেই বলতে পারে না। সেক্ষেত্রে স্কুলে একটি অভিযোগ বক্স থাকলে সেখানে শিশুরা অভিযোগগুলো নির্ভয়ে তুলে ধরতে পারবে। এরপর এ মামলার ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বুলিং প্রতিরোধের বিষয়ে আইনের খসড়া হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।