নিহতরা হলেন-আবদুল কাদের লিটন (৪৫) ও এ কে এম রুশদী (৫)।
এর মধ্যে আবদুল কাদের লিটনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামে, তার বাবার নাম মোহাম্মদ উল্লাহ (মৃত)। লিটন ওই ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ‘ক্লাসিক ফ্যাশন’ নামে একটি বায়িং হাউজের অফিস সহকারী ছিলেন। তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম দুই সন্তান রনি (২০) ও সোনিয়াকে (২২) নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। কাদের তার কর্মস্থলেই থাকতেন। মর্গে এসে স্বজনেরা তার পরিচয় শনাক্ত করেন।
নিহত রুশদীর বাবার নাম শহিদুল পির মানি ও মা জান্নাতুল ফেরদৌসি। তাদের বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামে। শিশুটির লাশ শনাক্ত করেন তার দাদা এ কে এম শহিদুল্লাহ। অগ্নিকাণ্ডে রুশদী’র বাবা মা উভয়ই দগ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত আরেকজনের পরিচয় মেলেনি। তবে ওই ভবনের ছাদের ঘরে বসবাসকারী একটি পরিবার দাবি করছে, এই লাশ তাদের মেয়ে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফরিন জান্নাত জুথির (১৭)। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২) পূর্ত ভবনের প্রশাসনিক সেকশনে চাকরি করেন। মা লাল বানু (৩৫) গৃহিণী, ভাই আশিক আপন (২৪) মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চার জনের এই পরিবারটি ওই ভবনের ছাদের একটি রুমে থাকেন।
মেয়েটির চাচা মো. সুরুজ্জামান বলেন, ‘আগুন লেগেছে সে আতঙ্কে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল জুথি। আর ওপর থেকে বাবা, ভাই গ্রিল বেয়ে বাইরে দিয়ে নামেন। তারা দুজনেই সামান্য আহত হন। মাও নামার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তার পা ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আমরা ধারণা করছি, পোড়া এই মেয়েটি আমাদেরই মেয়ে।’
বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা ছাদ থেকে পাশের ভবনে লাফিয়ে পড়ি। আমাদের আগেই মেয়েটি সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে চলে গেছে। এটা আমারই মেয়ে।’
এখন পর্যন্ত ওই ভবনের আর কোনও পরিবার ওই লাশ তাদের কোনও স্বজনের বলে দাবি করেনি।
হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার জীবন স্টালিন বলেন, ‘মৃত তিন জনের মধ্যে শিশুসহ দুই জন পুরোপুরি পুড়ে গেছে, যা দেখে শনাক্ত করার মতো না। তাই পোড়া দুই জনেরই ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে ফরেনসিক বিভাগকে বলা হয়েছে। একজনের শরীর পোড়েনি। সম্ভবত ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তার নাম আবদুল কাদের।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিউ ইস্কাটন মগবাজার দিলু রোডে (৪৫/এ) পাঁচ তলা ওই ভবনে আগুন লাগে। ভবনটির নিচ তলায় গ্যারেজে আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট গিয়ে সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখান থেকে তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার মো. বাবুল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বাড়ির কেয়ারটেকার লুৎফর রহমান জানান, ‘নিচ তলায় গাড়ির গ্যারেজ থেকে আগুন লাগে। পাঁচটি প্রাইভেটকার ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে। তিনজন মারা গেছে। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে বলে ধারণা করছি। নিচতলায় আগুন লাগার পর আমি বাইরে বের হয়ে সবাইকে চিৎকার করে বের হতে বলছি। হু হু করে আগুন নিচ থেকে ওপরে উঠে গেছে।’
আরও পড়ুন- দিলু রোডে আগুন: তিন জনের লাশ উদ্ধার