আইনমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাইলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক

আনিসুল হক, ইকবাল মাহমুদ ও মাহবুব উদ্দিন খোকন

পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নানকে প্রত্যাহারের (স্ট্যান্ড রিলিজ) ঘটনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগ চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বুধবার (৪ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘পিরোজপুরে সরকারি দলের সাবেক এক সংসদ সদস্যের জামিন কেলেঙ্কারি ও তাৎক্ষণিক বিচারকের বদলি’ শীর্ষক  সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একাধিক মামলায় পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ  মো. আব্দুল মান্নানের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিনের দরখাস্তটি খারিজ করে দুপুরে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। উক্ত জামিন বাতিলের আদেশের সঙ্গে সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিচারক আব্দুল মান্নানকে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজের পদ থেকে প্রত্যাহার করে (স্ট্যান্ড রিলিজ) আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। পরে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়ার চার ঘণ্টা পর একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন পুনরায় জামিনের আবেদন করেন।’

ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই তাদেরকে দুর্নীতির মামলায় জামিন দেওয়া হয়। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এরপরই জেলা ও দায়রা জজ  আব্দুল মান্নানকে প্রত্যাহার করা হয়। ওই ঘটনা স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অযাচিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যের জামিন নিশ্চিত করার জন্য পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে বদলি করেন। জেলা ও দায়রা জজ বদলির কারণে সুপ্রিম কো্র্টের (অনুমতির) কোনও তোয়াক্কা করা হয়নি। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যের জামিন না মঞ্জুর করার কারণে পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজকে আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

ওই জামিন কেলেঙ্কারি বিচার বিভাগের ওপর দেশের সাধারণ জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা আরও  বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে দেশবাসী মনে করছে— সরকারের নির্দেশে যেকোনও ব্যক্তির জামিন হতে পারে, বা সরকার চাইলে আদালতের মাধ্যমে বাতিল করতে পারে। জামিন কেলেঙ্কারির এই ঘটনার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।’

একইসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, যুগ্ম সচিব ও জামিন প্রদানকারী বিচারককে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের এবং জামিন কেলেঙ্কারির ঘটনাটি হাইকোর্টের একজন বিচারপতির অধীনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তিনি।

তাই বিচার বিভাগের ওপর এমন নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুদকের মামলায় সাজা প্রদান ও জামিন নামঞ্জুর আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই করা হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার খোকন।