পিপলস লিজিং পরিচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

হাইকোর্টআর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ২০০৪ সালের পর থেকে দায়িত্ব পালনকারী সব পরিচালকের নামের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) এই তালিকা দিতে বলেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ক হিসেবে নিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ মহাব্যবস্থাপক (আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ) মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম ও কাজী এরশাদুল আলম।
পরে আইনজীবী মেজবাহুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত কোম্পানিটির তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত ওই প্রতিষ্ঠানের ২০০৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যারা পরিচালক ছিলেন তাদের নাম ও ঠিকানাসহ একটা তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই তালিকা পাওয়ার পর আদালত এ মামলার পরবর্তী শুনানি নেবেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অবসায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (পিএলএফএসএল) সাবেক ৯ পরিচালকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর সে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলেও তা খারিজ হয়ে যায়। পরে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নে ‘দি ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট অ্যাক্ট, ১৯৯৩’-এর ২৯ ধারায় হাইকোর্টে আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যে ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তারা হলেন—সাবেক পরিচালক এম মোয়াজ্জেম হোসেইন, নারগিস আলামিন, হোমাইরা আলামিন, আরেফিন সামসুল আলামিন, মোহাম্মদ ইউসুফ ইসমাইল, মতিউর রহমান, বিশ্বজিৎ কুমার রায়, খবিরুদ্দিন মিয়া, মোহাম্মদ সহিদুল হক এবং প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ দুই কর্মকর্তা কবির মুস্তাক আহমেদ ও নৃপেন্দ্র চন্দ্র পণ্ডিত।
নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিচালকদের অর্থ আত্মসাতের কারণে আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের ২১ মে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে একই বছরের ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদন অনুমোদন করে।
পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পায় ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর। এরপর ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এ প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। এই টাকা থেকে পিপলস লিজিং ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যার মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি। খেলাপি ঋণের মধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৯ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে একই বছরের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়।