মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) ও বুধবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ছোটবড় ফার্মেসিগুলোতে এই দৃশ্য দেখা গেছে। ফার্মেসিতে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা সচেতনতার ঘাটতির কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ফার্মেসির মতো জায়গায় অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে যথাযথ জ্ঞান ফার্মেসি সংশ্লিষ্টদের থাকতে হবে। সচেতনভাবে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে ক্রেতাদেরকেও নিজের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ কেউ থাকলে বা হাঁচি কাশি থাকলে ওই ব্যক্তির বাজার বা ফার্মেসির মতো জায়গায় যাওয়া যাবে না। ঘরে থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। লক্ষণ আছে কিন্তু অনেকে সেটা হাইড করে চলছেন। বাজারে যাচ্ছেন, ফার্মেসিতে যাচ্ছেন। এটা করা যাবে না। তাদের বাসায় থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সন্দেহভাজন হলে বা লক্ষণ উপসর্গ থাকলে টেস্ট করানো হবে। এর আগে ঘরেই থাকতে হবে। হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সচেতন হতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।’
ফার্মেসিগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে চলছে না পাশাপাশি মানুষও অসতেনভাবে চলাফেরা করছেন। উভয়পক্ষের গাফিলতির কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ডা. আব্দুন নূর তুষার।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর,ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকার ফার্মেসিগুলোতে দেখা গেছে, কোনোটিতেই শতভাগ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। চেইন ফার্মেসিগুলোর কর্মীদের পিপিই পরিধান করতে দেখা গেছে। তারা জানান, একজন কর্মীর জন্য একটি করে পিপিই বরাদ্দ করা হয়েছে। ফার্মেসিতে কাজ শেষ হওয়ার পর কর্মীরা সেগুলো বাসায় নিয়ে যান। পরিষ্কার করে পরদিন আবারও একই পিপিই পরে কাজ করেন।
রাজধানী অধিকাংশ চেইন ফার্মেসিতে ক্রেতাদের অরক্ষিত রেখেই নিজেদের কর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন আরেকটি চেইন ফার্মেসি ‘ওয়েলবিয়িং’। তারা গ্লাসডোর বন্ধ রেখে ওষুধ বিক্রির করেন। হাতল ঠেলে ভেতরে ঢুকতে হয়। ভেতরে ঢুকে ক্রেতারা ওষুধ কিনছেন। গ্লাভস পড়ে ক্যাশ সামলালেও লেনদেনের পর হাত পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি কর্মীদের।
যদিও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. সুলায়মান হাত পরিষ্কার না করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক কর্মীর জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছি। তারা নিয়মিত হাত পরিষ্কার করেন।
দরজার হাতল পরিষ্কার না করার বিষয়ে মো. সুলায়মান বলেন, ‘দরজা সব সময় খোলাই থাকে। যাতে কাউকে ঠেলে প্রবেশ করতে না হয়। এখন হয়তো বন্ধ হয়ে আছে। আর হাতল আমরা নিয়মিতই পরিষ্কার করে থাকি।’
কিন্তু এর আগে ‘ওয়েলবিয়িং’ নামে এই ফার্মেসির সামনে ২০ মিনিটের বেশি সময় দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, পাঁচ জন ক্রেতা ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রত্যেকেই হাতল ঠেলে ভেতরে গেছেন। আবার হাতল টেনে বাইরে এসেছেন। এই সময়ের মধ্যে একবারের জন্যও হাতল পরিষ্কার করা হয়নি।
পাশেই রয়েছে ‘এসকে ফার্মেসি’ নামে আরেকটি চেইন ফার্মেসি। এই ফার্মেসির ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা নেই। ক্রেতাদের ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে দাঁড়িয়ে। তবে ভেতরে অবস্থান করা কর্মীদের অধিকাংশ সুরক্ষিত ছিলেন না। তাদের হাতে গ্লাভস ছিল না। খালি হাতেই ক্রেতাদের হাতে ওষুধ তুলে দিচ্ছেন। আবার একই হাতে টাকা নিচ্ছেন। হাত পরিষ্কারও করছেন না।
মুখে এমনটি দাবি করলেও প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতাদের হাত পরিষ্কার করার ঘটনা চোখে পড়েনি।