খাবারের জন্য মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা

কার্জন হল সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাতে ত্রাণের অপেক্ষা

করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের পরিবারের অনেকেই খাদ্যসামগ্রীর জন্য নগরীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান করছেন। এসব খেটে খাওয়ার মানুষের সবার চোখেমুখে মলিনতা। মাঝে-মধ্যে বিত্তবানদের কেউ কেউ কিছু খাদ্যসামগ্রী তাদের মাঝে বিতরণ করছেন। আবার কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কিছুই পাচ্ছেন না। শনিবার (৪ এপ্রিল) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

দুপুরে বঙ্গবাজার মোড়ে দেখা যায়, বঙ্গবাজার থেকে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে অর্ধশতাধিক মানুষ ফুটপাতে অপেক্ষা করছেন। তারা জানান, কোনও কাজকর্ম না থাকায় খাবার সংকটে রয়েছেন। এজন্য খাদ্যসামগ্রীর আশায় তারা ফুটপাতে অপেক্ষা করছেন। মাঝে-মধ্যে বিত্তবানদের কেউ কেউ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে আসেন।

কাটাবন মোড়ে ত্রাণের অপেক্ষায় অনেকেই

সেখানে কথা হয় সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এইরাস্তায় প্রায় জ্যাম লেগে থাকতো। এখানে ভিক্ষা করে পরিবার চালাতাম। কিন্তু এখন রাস্তায় কোনও মানুষ নেই। তাই ভিক্ষাও পাচ্ছি না। পরিবারের অক্ষম স্বামী ও তিন শিশু সন্তান রয়েছে। কেউ যদি খাবার এনে দেয় তাহলে পেট চলে। না হয় উপবাস থাকতে হয়।’

একটু সামনে গিয়ে হাইকোর্ট মোড়ের সামনে দাঁড়াতেই চারদিক থেকে ছুটে আসেন অনেক মানুষ। সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে থাকেন তারা।  সেখানে কথা হয় সাজিদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটা জুতার কারখানায় চাকরি করতাম। এখন কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। বেতনও নেই। গ্রামের বাড়িতেও যেতে পারছি না। বাসায় খাবার নেই। শুনেছি এখানে (হাইকোর্টে মাজার প্রাঙ্গণ) অনেকেই খাদ্যসামগ্রী বিতরণের জন্য নিয়ে আসেন। তাই এসেছি। একটু সহযোগিতা পেলে কয়েকদিন চলতে পারবো।’

একই অবস্থা দেখা গেছে নগরীর কাঁটাবন এলাকায়। সেখানেও খণ্ডখণ্ডভাবে কয়েকজন মানুষ ফুটপাতে বসে আছেন। তারা জানান, সকাল থেকে সেখানে অবস্থান করলেও কেউই খাবার বিতরণ করতে আসেনি। তাই এখনও না খেয়ে বসে আছেন। যদি কেউ খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন তাহলে রাতে রান্না করে খেতে পারবেন। তা না হলে উপবাস থাকতে হবে।

হাইকোর্টের গেটের সামনে ত্রাণের অপেক্ষায় অনেকেই

সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাদ্যসামগ্রীর আশায় অনেকেই অলি-গলিতে অপেক্ষা করছেন। এদের অধিকাংশেই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের সবাই বলছেন কোথাও কর্ম নেই। তাই বর্তমান সময়ে চরম অনটনে দিনাতিপাত করছেন তারা। সে কারণে খাদ্যের আশায় তারা অলিগলিতে অবস্থান করছেন। তবে এসব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। লোকলজ্জায় তাদের অনেকেই ত্রাণের জন্য সড়কে যাচ্ছেন না।

নগরজুড়ে নাগরিকদের এমন পরিস্থিতির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কর্মহীন হয়ে পড়ায় আমাদের অনেক নাগরিক কষ্টে আছেন। অনেকেই রয়েছেন যারা লোকলজ্জায় ত্রাণ নিতে আসেন না। তাদের জন্য আমরা হটলাইন চালু করেছি। আমরা স্বল্প পরিসরে তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া ৫০ হাজার মানুষকে এক মাস খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, যারা কষ্টে আছেন তারা যেন আমাদের হটলাইনে ফোন করেন। আমরা সাধ্যমতো তাদের বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

অপরদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্য নির্বাচিত মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, সবাই যাতে যার যার সাধ্যমতে অসহায় এসব মানুষের পাশে দাঁড়ান। আমরাও সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ ফ্ল্যাটফর্ম থেকেও প্রতিদিন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছি।

কার্জন হল সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাতে ত্রাণের অপেক্ষা