পুরান ঢাকায় পাম গাছে সাজানো পার্ক (ভিডিও)

রাজধানীর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন নবাবগঞ্জ পার্ক সাজানো হয়েছে নতুনভাবে। শিশু-কিশোরদের জন্য কর্নারের পাশাপাশি বড়দের জন্য আছে ফুটবল খেলার সুযোগ। সব শ্রেণির মানুষের কথা ভেবে ৫৪ দশমিক ৭৫ কাঠা জুড়ে বিস্তৃত এই মাঠ আধুনিকায়ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

শিশু কর্নারে সোনামণিরা উপভোগ করবে দোলনা, স্লিপার, ঢেঁকিকল, হোন্ডা, রাউন্ড হর্সসহ নানান রাইড। ফুটবল খেলার জায়গা ছাড়াও রয়েছে টেনিস কোর্ট। নিজেদের এলাকায় এমন একটি মাঠ পেয়ে বেশ খুশি স্থানীয়রা। যদিও করোনাভাইরাস আতঙ্কে আপাতত জনসমাগম বন্ধ রয়েছে।

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কপার্কের মাঝপথে সারি সারি পাম গাছ। গাছের গোড়ার অংশ নুড়িপাথর দিয়ে সাজানো। পাম গাছের সুবাদে পার্কটি নতুন রূপ পেয়েছে। গাছগুলোর একপাশে জনসাধারণের বসার জন্য রয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে বানানো বেঞ্চ।

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কমাঠের চারপাশে ৩০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ হাঁটার পথ। ওয়াকওয়ের নিচে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৬ ফুট প্রশস্ত ড্রেন, ফলে মুষলধারে বৃষ্টি হলেও পানি জমে থাকবে না। মাঠের নিচে তৈরি করা রিজার্ভারে জমে থাকা পানি পরিশোধনের পর পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। পানি ছিটিয়ে ঘাস পরিচর্যার জন্য আছে স্প্রিকলার সিস্টেম।

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কচারপাশে দুই ফুট উঁচু লোহার নেটের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন ফুল ও ফল গাছ। বকুল ফুল, বট গাছ, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বেশি। পাশে বেড়িবাঁধের ঢালুতে ব্লক ইট দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে।

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্করাতে এলইডি ল্যাম্পপোস্টের সুবাদে আলোকিত হয় পুরো মাঠ। পার্কটি সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হবে। কেউ অপরাধমূলক কাজ করলে একপাশে এলইডি ডিসপ্লেতে ভেসে উঠবে।

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কনবাবগঞ্জ মাঠ সাজাতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। উত্তর পাশে গড়ে উঠছে একটি পাঁচতলা মাল্টিপারপাস ভবন, এতে খরচ হচ্ছে ৭ কোটি টাকা। ভবনটিতে থাকবে কমিশনার কার্যালয়, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, ব্যায়ামাগার ও কফি হাউজ।

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কসিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ডিএসসিসি’র ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত পুরান ঢাকার লালবাগ থানার অন্তর্ভুক্ত নবাবগঞ্জ পার্ক ১৯৬৬ সালে প্রথম নির্মিত হয়। মাঠ ঘেঁষে রয়েছে ঢাকা শহররক্ষা সদরঘাট-গাবতলী বেড়িবাঁধ। সড়কের পাশেই কামরাঙ্গীরচর থানা।

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কএকসময় নবাবগঞ্জ পার্ক এলাকায় ট্যানারির বর্জ্যের দুর্গন্ধ বিরাজ করতো। ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ‘জলসবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পার্কটি আধুনিকায়ন করা হয়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাজারীবাগ ও বেড়িবাঁধ এলাকায় অপেক্ষাকৃত নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত লোকজন বসবাস করেন। তাদের সন্তানদের জন্য এখানে চিত্তবিনোদনের তেমন কোনও সুযোগ ছিল না। তাছাড়া নবাবগঞ্জ মাঠ অবহেলিত ও বেদখল ছিল। আমরা এটি উদ্ধার করে একটি আধুনিক পার্ক নির্মাণ করেছি। এতে শিশুদের জন্য বিনা পয়সায় উন্নতমানের খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।’

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কবিশিষ্ট স্থপতি রফিক আজমের নেতৃত্বে তার প্রতিষ্ঠান সাতত্যের শতাধিক স্থপতি নতুন নকশা প্রণয়নে কাজ করেছেন। তার মন্তব্য, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় অতীতে এমন দারুণ কাজ কেউ করতে পারেননি। যদি হয়েও থাকে, সেগুলো বেশি দিন টেকেনি। নবাবগঞ্জ মাঠ এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে বহুদিন এখানে সুপরিবেশ বজায় থাকে।’

পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পার্কছবি: প্রতিবেদক