করোনা পজিটিভ ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান

ড. আনিসুজ্জামান (ছবি: সংগৃহীত)

করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিলেন সদ্য প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকালে তার মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় এই ফল পাওয়া গেছে। তার ছেলে আনন্দ জামানকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

যোগাযোগ করা হলে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ড. আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান তাকে জানিয়েছেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে একবার তার বাবার শরীর থেকে করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে মৃত্যুর পর আরও একবার নমুনা সংগ্রহ করেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষার পর রাত সাড়ে ৯টায় তাকে জানানো হয়েছে ড. আনিসুজ্জামান কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করানোর জন্য তাকে (বিপ্লব  বড়ুয়া) ফোন দিয়েছিলেন আনন্দ।

এ ব্যাপারে  চেষ্টা করেও আনন্দ জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর বেসামরিক বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।

ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ২৭ এপ্রিল থেকে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ মে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ইউনিভার্সেল হাসপাতাল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল নেওয়ার সময় ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান হার্ট, কিডনিসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন। পরে তার স্মৃতিভ্রষ্টতা দেখা দেয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আনন্দ জামান ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে জানান, আজ সকাল থেকেই তার পিতা ড. আনিসুজ্জামানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দুপুরে তিনি বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। সিএমএইচের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে ওই স্ট্যাটাসে ড. আনিসুজ্জামানের করোনা পরীক্ষার কথা জানাননি তিনি। 
 
এদিকে, ভিন্ন একটি সূত্র জানিয়েছে, ড. আনিসুজ্জামানের ১০ মে আরও একবার করোনা পরীক্ষা হয়েছিল। তখন তার ফল নেগেটিভ আসে। 
 
এছাড়াও এ ঘটনার পর ড. আনিসুজ্জামানের পরিবার সদস্যদের নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি। তিনি যেসব হাসপাতালে ছিলেন সেগুলোর চিকিৎসক, নার্সসহ সেবাসংশ্লিষ্টরাও এখন কোয়ারেন্টিনে যাবেন কিনা বা তাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।  
এই প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক মৃত্যুকাল স্ত্রী সিদ্দিকা জামান, দুই মেয়ে রুচিবা ও শুচিতা এবং একমাত্র ছেলে আনন্দ জামানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহীকে রেখে গেছেন।
তার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি ছিলেন।