ঈদে বাইরে যাওয়া ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’

করোনাভাইরাসআগামীকাল সোমবার (২৫ মে) পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরের ঈদ কোনও আনন্দবার্তা নিয়ে আসেনি। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি চলছে বিশ্বব্যাপী।  থমকে গেছে বিশ্ব,  স্থবির হয়ে আছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের সময়ও কাউকে ঘরের বাইরে না যেতে আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, একই অনুরোধ জানিয়েছেন চিকিৎসকরাও।

তারা বলছেন, ঈদের আগের দিন এসেছে সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর, আমরা যদি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন না করি তাহলে এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলা যাচ্ছে না। চলতি মাসের শুরুতেই স্বাস্থ্য অধিদফতর কোভিড-১৯ নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে জানিয়েছে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশের কোনও লক্ষণ-উপসর্গ নেই। তাই কে আক্রান্ত এবং কে আক্রান্ত নন—সেটা একেবারেই অজানা। তাই ঈদে ঘরের বাইরে যাওয়া বা জনসমাগম করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রথম মৃত্যু হয় ১০ মার্চ। তারপর থেকেই শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ জন। এটিই এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৮০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজার ৫৩২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত হলেন ৩৩ হাজার ৬১০ জন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতে এবার দেশবাসীকে ঘরে বসে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রবিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এবছর আমরা সকল ধরনের গণজমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। কাজেই স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হবে না। ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঈদে ঘরের বাইরে যাওয়া এক কথায় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)  উপদেষ্টা এবং জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইতোমধ্যেই যারা কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পরিবারের লক্ষণবিহীন সদস্যের মধ্যে চারভাগের এক ভাগ পজিটিভ পাওয়া গেছে। কমিউনিটির ভেতরে লক্ষণবিহীন মানুষের হারও অনেক বেশি মন্তব্য করে মুশতাক হোসেন বলেন, তাই ঈদে ঘরের বাইরে বের হওয়া, আত্মীয় পরিজনের বাসায় গিয়ে আনন্দ করা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ঘরের বাইরে যাবার বিষয়ে কোনওরকম শিথিলতা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না, কোনও অজুহাতেই ভিড়ের মধ্যে যাওয়া যাবে না,  জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নিজ বাসার বাইরে অন্য কারও সঙ্গে মেশা যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই ঈদ কোনওভাবেই কোনও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসেনি, এটা ব্যতিক্রমী ঈদ। অন্যান্য বার যেভাবে ঈদে সবাই মিলে আনন্দ উৎসব হয়, এটা কেউ করবেন না। অবুঝের মতো আচরণ করলে আমাদের ভবিষ্যতে আরও ভুগতে হবে—তাই সবার প্রতি অনুরোধ যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে, মাস্ক পরে নামাজ পরতে হবে, হ্যান্ডশেক-কোলাকুলি করা যাবে না। কেউ যেন ঈদের আনন্দে বাইরে না ঘুরতে বের হন, আত্মীয় পরিজনের বাসায় না যাই—এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কিন্তু আরও বেড়ে যাবে। এবারের ঈদ আমাদের জন্য আনন্দের নয়—এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।

দেশের এ অবস্থায় যদি ঈদকে কেন্দ্র করে আত্মীয়-পরিজনরা জড়ো হওয়ার পরিকল্পনা করে তাহলে আর আমাদের কিছু বলার নেই মন্তব্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এগুলো সবই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ঈদের নামাজ পড়তে যেতেই নিরুৎসাহিত করছি জানিয়ে তিনি বলেন, আর যদি কেউ যেতেই চান তাহলে তাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেতে হবে। ঈদের দিনে কোনওভাবেই কোলাকুলি এবং হ্যান্ডশেক করা যাবে না। একইসঙ্গে বাইরে বেশিসময় থাকা যাবে না।

তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করেন তার লক্ষণ নেই মানেই তিনি করোনামুক্ত—এর চেয়ে বড় ভুল আর নেই। কারণ লক্ষণবিহীন রোগী আমাদের সমাজে প্রচুর। তাই কারও বাসায় যাওয়া যাবে না। জাহিদুর রহমান বলেন, আমরা জানি না, কে ক্যারিয়ার আর কে নন। লক্ষণ প্রকাশ নাও হতে পারে আবার লক্ষণ প্রকাশ হবার আগেও ভাইরাস ট্রান্সমিট হয়। তিনি বলেন, লক্ষণ প্রকাশ হতে অন্তত পাঁচ থেকে সাতদিন সময় লাগে কিন্তু এর আগেই আক্রান্ত থেকে আরেকজন সংক্রমিত হয় এবং এটাই এই ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক, আর এভাবেই এতো লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বজুড়ে।