টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট: উপসর্গ থাকলে পজিটিভ, না থাকলে নেগেটিভ

করোনাভাইরাস‘বুকিং বিডি’ ও ‘হেলথ কেয়ার’—এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল করোনা পরীক্ষার। বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর জন্য যোগাযোগ করেন। এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা নমুনা সংগ্রহের পর কোনও ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের পজিটিভ ও যাদের উপসর্গ নেই তাদের নেগেটিভ রিপোর্ট মেইল করে জানিয়ে দিতো। এজন্য প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিতো।

গ্রেফতারের পর পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। বুধবার (২৪ জুন) করোনাভাইরাস পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতারক চক্রের চার সদস্যের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো আরিফ চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরী, মামুনুর রশিদ ও বিপ্লব দাস। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

চক্রের অপর দুই সদস্য হুমায়ুন কবীর ও  তানজিনা পাটোয়ারী দোষ স্বীকার করে পৃথক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার (জিআর) পুলিশ কনস্টেবল (মুন্সি) আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, তেজগাঁও থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বুধবার দুপুরে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে আদালতে হাজির করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে  বিচারক তাদের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। অপর দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা পাটোয়ারীকে আদালতে হাজির করলে তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। ফলে জবানবন্দি গ্রহণ  করার আবেদন করা হয়। এরপর বিচারক জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৩ জুন) তেজগাঁও থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে

পুলিশ জানায়, গ্রেফতার হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা ‘বুকিং বিডি’ ও ‘হেলথ কেয়ার’ —এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে বাসায় বাসায় গিয়ে করোনা উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা ও সনদ দেয় বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দর থানার আশকোনা ও গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি তেজগাঁও থানা পুলিশ জানতে পারে, বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ভুয়া করোনার পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার দুপুর থেকে অভিযান শুরু করে পুলিশ। একপর্যায়ে তারা এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে বাকি তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি ল্যাপটপ থেকে অন্তত ৩৭ জনের ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়। দুটি ল্যাপটপ ও কম্পিউটারও জব্দ করা হয়েছে। সেগুলোতেও একাধিক ব্যক্তির ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে পুলিশ জানিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এই চক্রটি আগে ‘জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা’ (জেকেজি) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। তারা ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন লোকজনের নমুনা সংগ্রহের কাজ করতো। জেকেজি নামের প্রতিষ্ঠানটি আইইডিসিআর অনুমোদিত। সম্প্রতি তারা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর নিজেরাই অনলাইনে ‘হেলথ কেয়ার’ ও ‘বুকিং বিডি’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় বলে বিজ্ঞাপন দেয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই করোনা পরীক্ষা করার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা নমুনা সংগ্রহের পর কোনও ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের পজিটিভ ও যাদের উপসর্গ নেই তাদের নেগেটিভ রিপোর্ট মেইল করে জানিয়ে দিতো। এজন্য প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিতো।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতার আরিফুল চৌধুরী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেকেজি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আর হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা দম্পতি জেকেজির সাবেক স্টাফ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রেফতার প্রতারকদের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি ল্যাপটপে প্রাথমিকভাবে ৩৭টি করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আরও কয়েকটি ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট রয়েছে। এই প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।’

আরও পড়ুন- 

করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট: জেকেজিকে বাদ দিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর

করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার