শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলিফ ছাত্রাবাস নামের হোস্টেলটিতে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা থাকতো। ভর্তি হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আলিফ ছাত্রাবাসে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলো। এমনকি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে একটি ডেস্ক নিয়ে আলিফ ছাত্রাবাসের পরিচালক সেই খোরশেদ আলমও বসতেন। অমানবিক এই ঘটনার জন্য ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও দায়ী। গ্রেফতারের আগে খোরশেদও শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই তিনি শিক্ষার্থীদের ঘরের তালা ভেঙে জিনিসপত্র বের করে গুদামে রেখেছিলেন।
শিক্ষার্থী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শেরেবাংলানগর থানাধীন পূর্ব রাজাবাজারের ৪৩/ক পাটোয়ারি ভিলার আট তলার পুরোটাই ভাড়া নিয়ে আলিফ ছাত্রাবাস পরিচালনা করতেন খোরশেদ আলম। এই ছাত্রাবাসের সব শিক্ষার্থীই বেসরকারি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগে পড়াশোনা করছেন। করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরের মার্চে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তখেন শিক্ষার্থীরা যার যার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। এর মধ্যেই হোস্টেল কর্তৃপক্ষ সব শিক্ষার্থীর জিনিসপত্র বিক্রি করে এবং ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী সোহানুর রহমান সঞ্জয় বলেন, আমাদের রুমের তালা ভেঙে যে জিনিসপত্র বের করা হয়েছে, তার আগে আমাদের একটিবারের জন্যও বলা হয়নি। আমাদের শিক্ষার্থীদের সব মূল্যবান জিনিসপত্র শেষ। দামি জিনিসগুলো বিক্রি করে দিয়েছে আর সার্টিফিকেটগুলো কীভাবে হারিয়ে ফেলেছে জানি না। এগুলো এখন আমরা কীভাবে ফেরত পাবো তাও বুঝতে পারছি না। আমরা এর যথাযথ ক্ষতিপূরণ চাই।
ওয়ালিউল আলম জয় নামে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কাপড়-চোপড় না হয় হারিয়েছে, এগুলো আবার কেনা যাবে। কিন্তু সার্টিফিকেটগুলো তো নতুন করে হাতে পাওয়া অনেক কঠিন কাজ। এগুলো আমরা কীভাবে ফেরত পাবো? একজন হোস্টেল মালিক এতগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এত সহজেই নষ্ট করে দিতে পারেন না। আমরা তার যথাযথ শাস্তি ও আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই।’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, লকডাউনের পর হোস্টেল মালিক তাদের কাছে যখন ভাড়া চেয়েছিল, তখন অনেকেই ভাড়া দিয়েছে, আবার অনেকেই দেননি। ভাড়া একটু কমিয়ে নেওয়ার বিষয়ে হোস্টেল মালিককে অনুরোধও করা হয়েছিলো। এমনকি যেহেতু ভর্তির সময় সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আলিফ হোস্টেলের বিষয়ে সুপারিশ করেছিলো, সে কারণে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এসএম নূরুল হুদাকেও জানানো হয়েছিলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ছাত্রদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি।
যোগাযোগ করা হলে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার এসএম নূরুল হুদার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল বাশার জানান, কয়েক মাস ধরে তিনি অসুস্থ হয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীদের বিষয়টি তিনি জানতে পেরে রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছেন।
রাজধানীর কলাবাগান থানার ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিট সড়কের মুজিবুল হক কাঞ্চন নামে আরেক বাড়িওয়ালা আট শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ময়লার গাড়িতে তুলে দিয়েছেন। লকডাউনের কারণে শিক্ষার্থীরা বাসার নিচতলার মেসে না থাকায় এবং ভাড়া না দেওয়ার অজুহাতে এমন অমানবিক কাজ করেন তিনি। পরে সজীব নামে এক ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সজীব মিয়া জানান, গত ৩-৪ বছর ধরে তারা ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিট রোডের ৪/এ নম্বর বাসার নিচতলায় ৯ জন মিলে থাকতেন। তাদের মধ্যে ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। মার্চ মাসে তারা লকডাউনের কারণে বাড়িতে যান। এর মধ্যে তিন মাসের ভাড়া বাকি পড়ে। এ কারণে বাড়িওয়ালা তাদের কারও সঙ্গে কথা না বলেই বাসার জিনিসপত্র সব ফেলে দেন। এসব জিনিসপত্রের মধ্যে তাদের সবার শিক্ষা সনদও ছিল।
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক আক্তার হোসেন জানান, মামলার পর থেকে বাড়িওয়ালা পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরতে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে সে মালামালগুলো কোথায় ফেলেছে তা খুঁজে বের করারও চেষ্টা চলছে। বাড়িওয়ালাকে ধরতে পারলে বিষয়টি আরও ক্লিয়ার হবে বলে জানান তিনি।