করোনায় বোরো কৃষকের লাভ কমেছে ৪০ শতাংশ

screenshot-mail.google.com-2020.07.06-23_04_33করোনায় শ্রমিক সংকট, পণ্য পরিবহন ও আর্থিক টানাপোড়েনের মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে কৃষক। যদিও গত বছরের বছর ও এই বছরের ফলন প্রায় এক, তবুও এই সব সমস্যার কারণে বোরোর উৎপাদন কৃষকের প্রত্যাশিত পরিমাণের চেয়ে সাত শতাংশ (প্রতি একরে চার মণ) কমেছে। কৃষকের প্রত্যাশিত লাভের পরিমাণ কমে গেছে ৪০ শতাংশ। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার (৬ জুলাই) একটি ওয়েবিনারে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইজিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নারায়ণ দাস। মোট দুই হাজার ৮৩৪ জন বোরো কৃষকের ওপর গবেষণা করে এই তথ্য জানান তারা।

বিআইজিডি জানায়, কর্মক্ষেত্রের বিচারে কৃষি খাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ক্ষেত্র। করোনা প্রাদুর্ভাব পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুত্থানেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে এই খাত। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়টি পড়েছে বোরো ধান কাটার সময়ে। যে বোরো বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ চাষযোগ্য জমিতে আবাদ করা হয়। আর সেই কারণেই বোরো ধানের চাষ, উৎপাদনে করোনার প্রভাব ঠিক কতোখানি তা বোঝার কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এই গবেষণা চালানো হয়েছে।

গবেষণার তথ্য থেকে জানা যায়, কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ, কৃষককে বাড়তি মজুরি দিতে হয়েছে ১৭ শতাংশ। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শতকরা ৯৯ জন কৃষককেই তাদের ধান সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা প্রতি মণের চেয়ে কম দরে বিক্রি করেছেন। এই সব কারণে কৃষকের প্রত্যাশিত লাভের পরিমাণ কমে গেছে ৪০ শতাংশ। পুরো দেশে প্রত্যাশিত উৎপাদনের চেয়ে চার দশমিক ৮২ কোটি মণ বোরোর উৎপাদন কমেছে যার মূল্য তিন হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।

বিআইজিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নারায়ণ দাস বলেন, ‘গবেষণায় অংশ নেওয়া কৃষকেরা গড়ে ৭৬৫ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছেন। ৮০ শতাংশ কৃষক যারা ৯০০ টাকার বেশিতে প্রতি মণ ধান বিক্রয় করতে পেরেছেন, তারা দাম নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কৃষকেরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পান সেদিকে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

বিআইজিডি আরও জানায়, সারা দেশে কৃষককে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। ড. নারায়ণ দাসের নেতৃত্বে বিআইজিডির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সাইফুল ইসলাম ও সিমাব রহমান এই গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বোরো চাষিদের উৎপাদন, ব্যয় ও লাভের ওপর করোনা প্রভাব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা, কৃষকের সমস্যা নিরুপণ ও সমস্যার উত্তরণে প্রয়োজনীয় উপায় খুঁজে বের করা।

বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, ‘কৃষিতে সরকারি ঋণের সঠিক সরবরাহ প্রক্রিয়া তৈরিতে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এখানে অনেক কিছু করার আছে। খুব দ্রুতই সরবরাহ প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।’

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কৃষি অর্থনীতি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম. এ. সাত্তার মণ্ডল, এসিআই সিড এর বিজনেস ডিরেক্টর সুধীর চন্দ্র নাথ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিআইজিডির সিনিয়র উপদেষ্টা এম মুশাররফ হোসেন ভুইয়া।