সৌদিতে বিমানকে জরিমানার ঘটনা তদন্তের ব্যাখ্যা দিলো মন্ত্রণালয়

বিমান বালাদেশ এয়ারলাইন্সউড়োজাহাজে ওষুধ না ছিটিয়ে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে চার লাখ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করেছে সৌদি আরব। এ ঘটনার অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান। কমিটিকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার (১৫ জুলাই) এ ঘটনার ব্যাখা দিয়েছে  বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। যদিও মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) গণমাধ্যমে এ বিষয়টি আলোচনা আসলেও বিমানের পক্ষ থেকে কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এমনকি বিমানের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বুধবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,  গত কয়েকদিন ধরে ‘বিমানকে এককোটি টাকা জরিমানা করেছে সৌদি আরব’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকৃত বিষয় হলো—যে ঘটনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ওই পরিমাণ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল, তা ২০১৭ সাল ও তার কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত পুরনো ঘটনা। যে বা যাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার কারণে এই জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছিল, ওই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূলত, বিমানের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি আসামাত্রই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের জেদ্দা হেলথ ডিপার্টমেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে পরিচালিত ফ্লাইটে ‘ওয়ান শট স্প্রে’ নামের একটি জীবাণুনাশক দিতে হয়। যা বিমানের ফ্লাইটেও যথাযথভাবে দেওয়া হয়। নির্ধারিত এই জীবাণুনাশক দেওয়ার পর তার খালি টিউবগুলো নিয়ম অনুযায়ী জেদ্দা হেলথ ডিপার্টমেন্টের কাছে পরিদর্শনের জন্য উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়ে বিমানের ওই ফ্লাইটে কর্মরত কারও কারও অবহেলার দরুণ তা যথাযথভাবে ও নির্দিষ্ট সংখ্যায় উপস্থাপন করা হয়নি। এ কারণে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ মার্চ ২০১৭ ও তার কাছাকাছি সময়ে এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনায় ওই জরিমানা আরোপ করে।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখায় আরও  বলা হয়েছে, জরিমানার টাকা ওই সময়েই পরিশোধ করা হয়েছে। বিষয়টি তখন তদন্ত কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গিয়েছিল। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে বিদ্যমান সব অনিয়ম দূর করার আন্তরিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কর্মরত কারও অবহেলার কারণে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় অর্থ ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী এধরনের কর্মকাণ্ড রোধ করতে এই তদন্ত আবশ্যক। এছাড়াও পূর্বের বা বর্তমানের যেকোনও অনিয়ম পাওয়া গেলে বিমান কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বিমান কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এরকম কাজের জন্য প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তির মুখোমুখি করলে ভবিষ্যতে এধরনের কর্মকাণ্ড রোধ করা সম্ভব হবে।

এদিকে বিমান সূত্রে জানা গেছে,  সাড়ে চার লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কোটি এক লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। এই ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করা ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সুপারিশ দিতে কমিটি করা হয়েছে। বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দিন আহমদের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ১১ জুলাই এ কমিটি করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিমানের ব্যবস্থাপক গ্রাউন্ড সার্ভিস (এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস) মো. গোলাম সারওয়ার, সদস্য সচিব  করা হয়েছে সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. মাছুদুল হাছানকে। সদস্য হলেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপব্যবস্থাপক (অর্থ) প্রণব কুমার বড়ুয়া। ওই আদেশে বলা হয়েছে, কমিটি  প্রয়োজনে যেকোনও কর্মকর্তাকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করতে পারবেন। তবে সৌদি আরবে কোন তারিখে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের এই ঘটনা ঘটেছে বিমানের আদেশে তা উল্লেখ্য করা হয়নি।