মানবপাচার রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জাতিসংঘ ও নাগরিক সমাজের

BDUNNM_Logo

মানবপাচার, বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ, দমন ও শাস্তি নিশ্চিতে পালেরমো প্রটোকলের ২০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এবছর। মানব পাচারের মতো অপরাধ মোকাবিলায় একটি অধিকার-ভিত্তিক পদ্ধতিকে সম্মিলিতভাবে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মাইগ্রেশন নেটওয়ার্ক (বিডিইউএনএনএম) এবং মানব পাচার বিরোধী কারিগরি কার্যকরী দলের (কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পারসন্স টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ) সদস্যরা।

বুধবার (২৯ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মাইগ্রেশন নেটওয়ার্ক (বিডিইউএনএনএম)।

এতে বলা হয়, সারাবিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ আধুনিক দাসত্ব কিংবা পাচারের শিকার। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নারী, যাদের বেশিরভাগই যৌন শোষণের শিকার। জাতিসংঘের ধারণা মতে, বাংলাদেশ পাচারের শিকার অনেক মানুষের উৎপত্তি ও গন্তব্যস্থল। এখানে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ পাচারের শিকার হন। সম্প্রতি বিশ্ব শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউনিসেফ এবং ইউএনওডিসি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোভিড-১৯ ভাইরাস পাচার পরিস্থিতির উপর সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিডিইউএনএনএম বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর প্রতিবছর ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে স্তরভিত্তিক র‍্যাংকিং পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে পাচার নির্মূলের ন্যূনতম মানসমূহ মেনে চলার ক্ষেত্রে দেশের প্রচেষ্টা পরিমাপ করা হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২০ সালের টিআইপি প্রতিবেদনে পূর্বের বছরের দ্বিতীয় স্তরের ওয়াচ লিস্ট থেকে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ এবছর দ্বিতীয় স্তরে স্থান অর্জন করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্বের তুলনায় ২০১৯ সালে মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদর্শিত প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। এসকল প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে- অধিক সংখ্যক পাচারকারীকে দণ্ড প্রদান, অধিকসংখ্যক শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, ২০০০ জাতিসংঘ টিআইপি প্রটোকল অনুসরণ করা, বাংলাদেশের পাচার বিরোধী আইনে নির্ধারিত সাতটি পাচারবিরোধী ট্রাইবুন্যাল গঠন। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশও প্রদান করা হয়েছে। সেই সব সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত ও মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি-বান্ধব বিচার ব্যবস্থা গঠনের আহ্বান জানায়।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, 'এই বছর, এই দিনে, আমি জাতিসংঘের বিশ্বব্যাপী মানবপাচার বিরোধী ক্যাম্পেইনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করছি; যেখানে প্রথম সাড়াপ্রদানকারীদের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে। এই ব্যতিক্রম সময়ে, আমাদের অবশ্যই মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রথম সাড়াপ্রদানকারীদের প্রশংসা করতে হবে যারা পাচারের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিতকরণ, সহায়তা প্রদান, মানসিক সেবা প্রদান এবং তাদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিতে কাজ করে চলেছেন এবং একই সঙ্গে পাচারকারীদের অব্যাহতিকেও চ্যালেঞ্জ করছেন। কোভিড-১৯-এর এই সংকটকালীন সময়ে, প্রথম সাড়াপ্রদানকারীদের অপরিহার্য ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কেননা এই মহামারির সময়ে পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, 'মানব পাচার মানবাধিকারের একটি গুরুতর লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশ সরকার এই ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধে সক্রিয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের পাচার সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে যা পরবর্তীতে টিআইপি কেসে পরিণত হয়েছে, যা পাচার বিরোধী সাড়াপ্রদানে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। তবে, বাংলাদেশ সরকার আনন্দিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের টিআইপি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে উন্নীত হয়েছে। এই বিষয়ে এবং টিআইপি প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহকে কার্যকর করতে আমরা মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ অনুসরণ করতে কাজ চালিয়ে যাব এবং পাচারকারীদের প্রতিরোধ ও তাদের বিচার নিশ্চিতে এবং পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করব।'