পদোন্নতির দাবিতে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসকদের স্মারকলিপি

১১২২পদোন্নতির দাবিতে  উপাচার্য বরাবর তৃতীয়বারের মতো স্মারকলিপি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঞ্চিত মেডিক্যাল অফিসার ও গবেষণা সহযোগীরা। প্রায় দুই শতাধিক পোস্ট গ্রাজুয়েট কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) এ কর্মসূচি পালন করেন।

দেড় যুগের বেশি সময় ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর প্রথম দফায় আন্দোলন করেন তারা। সেদিনও প্রথম স্মারকলিপি দিয়েছিলেন এই চিকিৎসকরা। এরপর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় এবং আজ  বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) তৃতীয় দফায় তারা এই স্মারকলিপি দেন।

বিএসএমএমইউ’র মেডিসিন, নিউরোমেডিসিন, নিউরোলজি, নিউরো সার্জারি, গাইনি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, রিউম্যোটোলজিসহ প্রায় ৫৪টি বিভাগের চিকিৎসকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তির দফতরে অবস্থান নিয়ে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে দাবি পেশ করেন।

স্মারক লিপিতে বলা হয়, বিএসএমএমইউ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও স্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরবর্তীতে যারা পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করবেন, এ ধরনের চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা ছিল। যেখানে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর তাদেরকে স্ববেতনে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হতো। পরবর্তীতে ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন অনুযায়ী সেই পদে আত্মীকরণ করা হতো। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই আইনটি অজানা কারণে রহিত হওয়ার অভিযোগ করেন এই চিকিৎসকরা। তারা জানান, প্রায় দুই শতাধিক চিকিৎসক পদোন্নতিবঞ্চিত অবস্থায় আছেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন,  যারা পদোন্নতিবঞ্চিত আছেন, তাদের অনেকের অবসরের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে এবং প্রায় আট বছর ধরে অনেকে পদোন্নতি না পেয়ে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। যদিও তাদের অনেকের  দেশের সেরা ডিগ্রি এফসিপিএস ও এমডি সম্পন্ন করা আছে।

তাদের অভিযোগ, সরকারি সেক্টরে যে সব চিকিৎসক কর্মরত তারা চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করলেই তাদের দ্রুত কনসালটেন্ট পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ডিপিসি এর মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। কিন্ত বিএসএমএমইউ-তে কর্মরত প্রায় দুই শতাধিক পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলেও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

আন্দোলনরত বিএসএমএমইউ'র চিকিৎসকদের দাবি— করোনার এই পরিস্থিতিতেও টেলিমেডিসিন সেবা, বহির্বিভাগের সেবা, ইনডোরে রাউন্ড, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ফিভার ক্লিনিক এবং কোভিড ইউনিটের রোগীদের সেবা প্রদানসহ সহকারী অধ্যাপক পদের সমমানের কাজে ব্যস্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবার মানকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানান, চিকিৎসকদের পদোন্নতি বঞ্চনার এই বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করার জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরসহ সব পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি সিন্ডিকেট কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সিন্ডিকেট মিটিং এর আগে তাদেরকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই কমিটির মেয়াদ ছয় মাসের বেশি পার হয়ে যাওয়ার পরেও সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট প্রদান না করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মৌন মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একটি সিন্ডিকেট বৈঠকে বিএসএমএমইউর বিধিমালা থেকে চিকিৎসকদের পদোন্নতি সংক্রান্ত ১৯৯৯ সালের নীতিমালাটি বাদ দেওয়া হয়।