দুদকের ব্যর্থতা রয়েছে: হাইকোর্ট

জাহালমঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলার ‘ভুল আসামি’ হয়ে কারাভোগ করা টাঙ্গাইলের জাহালমের বিষয়ে দুদকের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, জাহালমকাণ্ডে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা শিক্ষানবিশ ছিলেন এবং এ ঘটনার তদন্তে দুদকের ব্যর্থতা রয়েছে।

জাহালমকাণ্ডে ক্ষতিপূরণের রায় ঘোষণাকালে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, জাহালমের বিরুদ্ধে তদন্তকারী দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা শিক্ষানবিশ ছিলেন এবং এ ঘটনার তদন্তে দুদকের ব্যর্থতা রয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে ভুল ব্যক্তিকে আসামি করে কারাগারে রাখার মতো ঘটনা দুদকের কাছে কখনোই প্রত্যাশিত নয়। 

এরপর আদালত টাঙ্গাইলের জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় ঘোষণা করেন। আগামী এক মাসের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই টাকা প্রদান করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের পর পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে  আদালতের রায় বাস্তবায়ন সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিল করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এসময় আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। অন্যদিকে জাহালমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুভাস চন্দ্র।

প্রসঙ্গত, একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। এরপর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চার জনকে তলব করেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এরপর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজির হলে হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং এ বিষয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চান আদালত।

এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল জাহালমকাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। পাশাপাশি জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সকল ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে এ মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমুটো) হয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ করে রায় দিলেন হাইকোর্ট।