আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নয় মাসে প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারে’ ২১৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময়, এনকাউন্টারে নিহত হন ১৮৫ জন। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যান ২৭ জন।
এ সময়ে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা, ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক নির্যাতনের সংখ্যা এবং ঘটনার ধরণে ভয়াবহতা বেড়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সাভারে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির বলপিয়ে আদাম এলাকায় চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পাশাপাশি তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। অন্যদিকে ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্থানীয় ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মী স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, করোনাকালীন সময়ে দেশে এবং বিদেশে অভিবাসী শ্রমিকদের আটক ও নির্যাতনের নানা ঘটনা ঘটেছে। ১ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনাম ফেরত ৮১জনসহ মোট ৮৩ জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিককে কারাগারে পাঠানো হয়। নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ আটককৃত অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত না করেই ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ২১৯ জন অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে সরকারি কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিন থাকার পর ৪ জুলাই সেখান থেকে তাদেরকে ৫৪ ধারায় আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয় এবং সম্প্রতি ২৮ সেপ্টেম্বর লেবানন ফেরত ৩২ জনকে একইভাবে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
গত নয় মাসে কারা দেশের কারাগারগুলোতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ৫৮ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৪ জন এবং হাজতি ৩৪ জন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ
গত নয় মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের শিকার হয়েছেন চারজন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন একজন।
নারী নির্যাতন ও হত্যা :
যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সংখ্যা ও এর ভয়াবহতা বেড়েছে।
ধর্ষণ ও হত্যা:
এ সময়কালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫জন, যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হন ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ২০৮ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী।
যৌন হয়রানি ও সহিংসতা :
গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে ১২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারী ও ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন।
শিশু নির্যাতন ও হত্যা :
গত নয় মাসের শিশু নির্যাতন ও হত্যার পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময়ে এক হাজার ৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এছাড়া ৬৪৭ শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন :
এ সময়ের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪৭টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪২ জন। এছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি বসতঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি :
গত নয় মাসে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ২০৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে বিজয় টিভি’র ধামরাই প্রতিনিধি জুলহাস উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
সীমান্ত সংঘাত :
এ সময়ে ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে ৩২ জন এবং শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১৮ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ২০ জন।