চিকিৎসা বর্জ্যের ৯৩ ভাগই সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে: ব্র্যাক

১০০

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা বর্জ্যের মাত্র ৬ দশমিক ৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়।  বাকি ৯৩ দশমিক ৪ ভাগ বর্জ্যই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় নেই। ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি পরিচালিত ‘কোভিড-১৯ মহামারিকালে কার্যকর মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’  বিষয়ক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল সোমবার (৫ই অক্টোবর) এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে প্রকাশ করে ব্র্যাক।

ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, সারাদেশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র ৩৫ টন (১৪ দশমিক ১ শতাংশ) সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল। এর অধিকাংশই আবার রাজধানী ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ এবং  মাত্র একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপসারণ ও শোধন করা হয়। বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও, তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব কোনও ব্যবস্থাপনা নেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর।

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন,  ‘মানুষের ভোগ বাড়তে থাকায় বর্জ্যও বাড়ছে। এ বিষয়ে আমাদের ব্যবস্থাপনার ঘাটতি আছে। এর কারণ আগে থেকে গুরুত্ব না দেওয়া, জনগণের অসচেতনতা, প্রযুক্তির অভাব আরও অনেক কিছু। এখন যোগ হয়েছে মেডিক্যাল বর্জ্য। এখন নিয়ম করা হচ্ছে— প্রতিটি হাসপাতালে এই বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলতে হবে। দেশটা তো আমাদের সকলের, তাই সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকেই এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘গত মে মাসে শুধু ঢাকাতেই ৩ হাজার টন মেডিক্যাল বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের  জন্য এই বর্জ্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

ব্র্যাক জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার চলতি বছরের ৩০ মে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। ৮২ দশমিক ১ ভাগ মানুষের কাছে এটি অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এসব সুরক্ষা সামগ্রী পুনর্ব্যবহার করেন।

ওয়েবিনারের সভাপতি ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই  সমস্যার মোকাবিলায় চারটি বিষয়ে জোর দিতে হবে— সচেতনতাকে অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, সকলের উদ্যোগের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জন, লাগসই সমাধানের কৌশল নির্ধারণ। এই দায়িত্ব পালনের একটা সুস্পষ্ট বিভাজন দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে এই সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে পারে।’

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহাম্মদ বলেন, ‘বিদ্যমান কাঠামোয় মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বা উদ্যোগ নেই, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সংকট সমাধান সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্র্যাকের দেশব্যাপি নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে একটি সময় উপযোগী সমাধান বের করা সম্ভব। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্র্যাকের মতো উন্নয়ন সহযোগীকে পাশে পেতে চায় পরিবেশ অধিদফতর।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. বদরুল আমিন বলেন,  ‘কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বর্জ্য গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এগুলো আলাদা করা যাচ্ছে না। আমরা এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি, যাতে গৃহস্থালি থেকেই এই বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করা যায়। অন্যদিকে হাসপাতালের বর্জ্যও সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে চলে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট অধিদফতরগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে হাসপাতালের বর্জ্য আলাদাভাবে হস্তান্তর করা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করা দরকার।’