বাজার দরের অর্ধেক দামে গুলশান সেন্টার পয়েন্টের ডিএনসিসির প্রাপ্য ফ্ল্যাট প্রতি বর্গফুট মাত্র ১২০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এতে করপোরেশনের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। সরকারের অডিট বিভাগের ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের হিসাব নিরীক্ষায় এই অনিয়ম ধরা পড়ে। জড়িতদের তদন্ত কমিটি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য সুপারিশ করা হলেও এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজস্ব জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে ৫টি চুক্তি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে দুই কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে মাত্র ১২০০ টাকা দরে স্পেস বিক্রি করা হয়েছে। ডিএনসিসি গুলশান-২ বাণিজ্যিক এলাকার রোড নং-৯০, ৯১ ও ৪৬ এর ৬০ কাঠা (৪০২৯ বর্গমিটার) জমিতে ৪৩ হাজার ৩৬৯ দশমিক ২১ বর্গফুট বহুতল শপিং এবং বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ‘গুলশান সেন্টার পয়েন্ট’ নির্মাণের জন্য ২০০৬ সালের ৩ মে বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়। ডিসিসি ও বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটডের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তানুযায়ী ডিসিসি পুনর্বাসন কাজের জন্য ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নগদ নেবে ও বিনিময়ে ডেভেলপার কোম্পানি ডিসিসির প্রাপ্য শেয়ার থেকে প্রতি বর্গফুট স্পেস ১২০০ টাকা দরে বুঝে নেবে।
সরকারের অডিট বিভাগ তার আপত্তিতে জানিয়েছে, ২০০০ সালের ২১ নভেম্বর র্যাংস প্রোপার্টি লিমিটেড ও জাকিয়া তুল্লাহ বানুর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী গুলশানে আবাসিক প্লটে নির্মিত ফ্লাটের প্রতি বর্গফুট স্পেসের মূল্য যদি দুই হাজার টাকা দরে সমন্বয় হয় তাহলে ২০০৬ সালের ৩ মে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক গুলশান-২ এলাকার বহুতল মার্কেটের প্রতি বর্গফুট স্পেস এর দাম ১২০০ টাকা দরে সমন্বয় মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতি বর্গফুট ৮০০ টাকা করে কম বিক্রি করায় সরকারের ক্ষতি হয় ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৮ টাকা। এসব আপত্তির বিষয়ে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের জবাব পায়নি অডিট অধিদফতর।
এ আর্থিক ক্ষতির বিষয় উল্লেখ করে ২০১৫ সালের ২৮ জুন কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে অডিট অধিদফতর। পরে একই বছরের ১৩ আগস্ট তাগিদপত্র জারি করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণায়লয় থেকে পাঠানো স্মারকে তারা কোনও জবাব পাননি। সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর আধা সরকারি পত্র জারি করা হয়। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অডিট অধিদফতর জানিয়েছে এসব অডিট কাজে তাদের কাছে চুক্তির মূল কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়নি। যা আইনেরও লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন বিষয়গুলো জানতে পেরেছি। কমিটি যেহেতু সুপারিশ করেছে আমি আইনগতভাবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এভাবে রাষ্ট্রের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে যারা ব্যক্তি স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা রেহাই পাবে না।