নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান

Webianr photo 2- Towards Creating a Future without Violence-24-11-20

সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শুধু সরকারের ওপর দায়িত্ব দিয়ে দিলেই হবে না। প্রয়োজন সবার আন্তরিক সহযোগিতা। কারণ সবার সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ ছাড়া সরকারের একার পক্ষে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সহিংসতা মুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। আর এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৬ দিনব্যাপী ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২০’ এর উদ্বোধন করে প্রতিষ্ঠানটি।

ওয়েবিনারে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতাগুলোর চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করতে আলোচনা হয়।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'অতীতে সিটি করপোরেশনে নারী ও শিশু বিষয়ক কোন পৃথক কমিটি ছিল না, আমরা নতুন করে এই বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করেছি। পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্য আর কী কী করা যায় তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি এবং আমরা চাই সবাই আমাদের সহযোগিতা করবেন।'

তিনি আরও বলেন ''মহাখালীতে নারীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। আমরা আগামী জানুয়ারি থেকে ৪৬ হাজার লাইট রাস্তায় লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি, যাতে নগরবাসী স্বচ্ছ ও আলোকিত ঢাকায় চলাচল করতে পারে। আর আগামী মাসেই ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ নামে নতুন অ্যাপ আসছে, যেখানে নগরবাসী খুব সহজেই যেকোনও ধরনের অভিযোগ প্রদান করতে পারবেন।''

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড সদস্য এম নাসিমুল হাই বলেন, “বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা আমাদের বিবেককে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। আমরা আশা করবো এই ধরনের ঘটনা যেনো ভবিষ্যতে আর না ঘটে।'

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টোরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড. মো আবুল হোসেন বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিত চেষ্টা করতে হবে। এজন্য পাঁচটি ফ্যাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ- প্রথমত, সরকারের সকল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সহযোগিতা, দ্বিতীয়ত, জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো, তৃতীয়ত, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে তথ্য ও সহযোগিতা প্রদান, চতুর্থত, সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্তীকরণ যারা সমাজের কথাগুলোকে তোলে ধরেন এবং পঞ্চমত, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও সামাজে প্রভাবশালী ব্যক্তির সক্রিয় ভূমিকা পালন।''

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশি কবীর বলেন, ‘প্রত্যেক জায়গায় নারীদের নিজের ওপর নিজের সাহস রাখতে হবে। নারীসহ সকলকে সচেতন করতে হবে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর নিজের কোনও দোষ নয়, বরং নির্যাতনকারীই এর জন্য দোষী। সবাইকে একত্রিত করে চিন্তা ও মনস্তাত্তিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নারী প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হবে।'

ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দুঃখজনক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সামাজিক মাইন্ড সেট যদি পরিবর্তন না করা যায় তাহলে কেবল আইন দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না।'

ওয়েবিনারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) সিফাত ই-রব্বানী বলেন, “বর্তমান পুলিশ প্রশাসন নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে অত্যন্ত সংবেদনশীল। নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত উইমেন ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার রয়েছে আমাদের যেখানে ভুক্তভোগী নারীদের বিভিন্নি ধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হয়। অভিযোগ প্রদানের জন্য আমাদের হটলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। বিডি পুলিশ হেল্প লাইন নামে একটি অ্যাপও রয়েছে। সাইবার স্পেসে মেয়েদের হয়রানি প্রতিরোধে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে, যা নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত।'

সমাপনী বক্তব্যে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, 'আমরা চাই আর কোনও নারী যাতে নির্যাতনের শিকার না হয়।'