আবারও ঊর্ধ্বমুখী করোনা?

শাহবাগে র‌্যাবের অভিযান ও মাস্ক বিতরণদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের পর এর ঊর্ধ্বমুখী আচরণ দেখা যায় মে মাসের দিকে। এরপর জুনে সেটি আরও বেড়ে যায় এবং জুলাইতে গিয়ে স্থিতিশীল পর্যায়ে অবস্থান করে। জুলাইয়ের শেষে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা শনাক্ত নিম্নমুখী থাকলেও এরপর থেকে আবারও শনাক্ত ওপরের দিকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এখন আর শীত নির্ভর নয় বরং বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সামনে সংক্রমণ আরও বাড়বে। কারণ বায়ুদূষণের সঙ্গে বক্ষব্যাধির সম্পর্ক আছে এবং তাতে করোনার ঝুঁকি থাকে বেশি।


এই মুহূর্তে করোনার তুলনামূলক চিত্র
দেশে করোনায় এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪২৩ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ হাজার ৭১৩ জন। গত অক্টোবর মাসে মোট শনাক্ত ছিল ৪২ হাজার ৮৬৯ এবং নভেম্বর মাসে ৫৬ হাজার ২৩৭ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে ১৩ হাজার ৩৬৮ জন। অন্যদিকে অক্টোবরে মৃত্যু ছিল ৬৩৬ এবং নভেম্বরে ৭০৯ জন। অর্থাৎ মৃত্যু ৭৩ জনের বেশি হয়েছে অক্টোবরের তুলনায়। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশে এখন পর্যন্ত কোভিড সংক্রমণ নিয়ে একমাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটেছিল জুন মাসে ৬৪ জন। ওই মাসে এক হাজার ১৯৭ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জুলাইতে মোট মৃত্যু ছিল ১ হাজার ২৬৪ জন। আগস্টে এই সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৯৮ জনে।
৬২ শতাংশ শনাক্তই নভেম্বরের শেষ ১৫ দিনে
দেশের করোনার পরিসংখ্যান বলে, সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ২ হাজারের কিছুটা বেশি। এরপর আর ২ হাজারের ঘর করোনা শনাক্ত ছুঁতে পারেনি। এর ৭১ দিন পর ১৬ নভেম্বর আবারও করোনার শনাক্ত দাঁড়ায় ২ হাজারের ঘরে। এদিন শনাক্ত হয় ২ হাজার ১৩৯ জন। পরদিন আরেকটু বেড়ে শনাক্ত দাঁড়ায় ২ হাজার ২১২ জন। এরপর শুধু ১৫ দিন মোট শনাক্ত হয় ৩৪ হাজার ৮৯২ জন। অর্থাৎ এই কয়দিন গড়ে ২ হাজার ৩২৬ জন শনাক্ত হয়েছে। আর পুরো মাসে শনাক্ত হয়েছে ৫৬ হাজার ২৩৭ জন। অর্থাৎ পুরো মাসের ৬২ শতাংশই শনাক্ত হয় শেষ ১৫ দিনে।
সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী
দেশে করোনা সংক্রমণের হার আগস্টের পর থেকে স্থিতিশীল হলেও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বরে তা উঠানামার মধ্যেই আছে। অক্টোবরের প্রথমে সংক্রমণের হার অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত ছিল ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এরপর অক্টোবরের শেষে তা দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫০-তে। নভেম্বরের শুরুতে হার ছিল ১৩ দশমিক ৪৭ এবং শেষে হার ১৪ দশমিক ৭৯। তবে এই হার সম্প্রতি ১৬ শতাংশ অতিক্রম করেছিল।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন সামনে সংক্রমণ বাড়বে। তবে কেউ কেউ এও মনে করেন, এটা আগে থেকে বলা খুব কঠিন।
সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ ড. আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনা সংক্রমণ সামনে আরও বাড়বে। নভেম্বরে কিছুটা উঠানামা হয়েছে কিন্তু বাড়তির দিকেই তো আছে। সংক্রমণ এই মুহূর্তে বাড়ার দিকেই আছে। কারণ হচ্ছে শীতকাল নয়, এসময় আমাদের সবচেয়ে বড় রিস্ক হলো ধূলিকণা। করোনা না থাকা অবস্থায় বিগত বছরে বায়ুদূষণের কারণে এই সময়ে অনেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। যারা বয়স্ক যাদের হাঁপানি ছিল তাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে। হাঁপানি, ব্রংকাইটিস এগুলো হচ্ছে রিস্ক ফ্যাক্টর করোনার ক্ষেত্রে। তাই এখানে আরও করোনা আক্রান্ত পাওয়া যাবে। রোগী বাড়ার সঙ্গে শীতের কোনও সম্পর্ক নেই। বায়দূষণ রেস্পারেটরি সিস্টেমে অনেক সমস্যা তৈরি করে। করোনাও তো একই জায়গায় সমস্যা তৈরি করে। সুতরাং রোগী তো বাড়বেই।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য অংশে যখন মহামারিটি আছে, তখন এখানেও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলে কমে যাবে নাইলে বেড়ে যাবে। শীতকাল কিংবা গ্রীষ্মকাল একই আশঙ্কা থেকে যায়। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সময়ে সময়ে বেড়ে গিয়ে একটি রেঞ্জের মধ্যে থাকছে। একদম রাইজ কিন্তু কখনও হয়নি। মে, জুন জুলাই সবচেয়ে বেশি ছিল, দীর্ঘদিন ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। আগস্টের শেষে একটু নামলো, তারপর ১০-১৫ ছিল এখন আবার ১২ থেকে ১৫ এর মধ্যে আছে।
তিনি আরও বলেন, দূষণ আমাদের এখানে গ্রীষ্মকালেও থাকে। শীতে সমস্যা হলো অ‌্যালার্জির কারণে অনেকের সর্দি কাশি হয়, তার সঙ্গে করোনার সংক্রমণ হলে ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। তাছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে মেলামেশা বেশি হয়। তাতেও বাড়তে পারে সংক্রমণ।