দুপুরে উচ্ছেদ বিকালে দখল, পুলিশ বক্সের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে!

1রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সাইকেল লেন থেকে অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদের দুই ঘণ্টা পর আবার সেই লেন দখলে নিয়েছে তারা। তবে এখনও মাঝ লেন বরাবর যে ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। সেটা উচ্ছেদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ডিএনসিসির মহাখালী অঞ্চলের (অঞ্চল-৩) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য ১টি মাইক্রোবাস ও ১টি প্রাইভেটকার চালককে মোট ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া প্রায় শতাধিক ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করা হয়।

2

বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বিটিসিএল টেলিফোন রাজস্ব ভবন, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, সেচ ভবনের সামনে সাইকেল লেনের ওপরে সরকারি গাড়ি পার্কিং করা। রাস্তায় বিকল হয়ে পড়া গাড়ি, সিএনজি, রিকশা দাঁড়ানো। নিজ লেনে জায়গা না পেয়ে মূল সড়ক দিয়ে যাচ্ছে সাইকেল। অবৈধ পার্কিংয়ের সবাই যেন না বোঝার ভান করে বসে আছে।

সংসদ সদস্য ভবন ২-এর সামনে সাইকেল লেনের ওপর পার্কিং করে আছে আবদুল মালেকের গাড়ি। দুপুরে উচ্ছেদের পর আবার বিকেলেই কেন সাইকেল লেন দখল করেছেন—এমন প্রশ্নে আবদুল মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি জানতামই না এটা সাইকেল কেন? এটা একজন পুলিশের এসপির গাড়ি। ভেতরে কাজে গেছেন। আমি জানলে রাখতাম না। আমি সরিয়ে নিচ্ছি।

দুপুরে উচ্ছেদের পর বিকালে আবার দখল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসলে মানুষ সচেতন না। আবার অনেকে জানেনও এটা সাইকেল লেন। আমরা এই অভিযান তিন দিন চালিয়ে যাবো। মূল উদ্দেশ্য থাকবে মানুষকে সচেতন করা বা জানানো এটা সাইকেল লেন। পারতপক্ষে আমরা জরিমানা করবো না।

4

মাঝ লেন বরাবর ট্র্যাফিক পুলিশ বক্সের বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বক্সটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজে জন্য ব্যবহার হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষে থেকে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। তারপর আমরা এই ট্রাফিক পুলিশ বক্স সাইকেল লেন থেকে উচ্ছেদ করবো।

বড় রাস্তার পাশে সাইকেল চালানোর জন্য একসময় লেন ছিল। অপরিকল্পিত নগরায়ণে মূল রাস্তা থেকে হারিয়ে যায় সেই লেন। সম্প্রতি রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর উভয় পাশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে সাইকেল লেন করা হয়। তবে এই সড়কটি ট্রাফিকের দুই জোনের আওতায় পড়ায় সাইকেল লেনটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে লেনের ওপর দিয়ে চলছে না দ্বিচক্রযান।

3

অন্যদিকে চালু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই হারিয়ে যেতে বসা সাইকেল লেন নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশের। ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের আওতায় পড়েছে এই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। এই সাইকেল লেনের সড়কটি অর্ধেক অর্থাৎ খামারবাড়ি থেকে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত পড়েছে ট্রাফিক তেজগাঁও জোনের এলাকায়। আবার সেখান থেকে ধানমন্ডি-২৭ মোড় হয়ে আড়ং পর্যন্ত পড়েছে মোহাম্মাদপুর জোন ট্রাফিক এলাকায়। এজন্যই এই অবহেলা কিনা, সেই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তারা।

জানতে চাইলে তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক কাজী মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাইকেল লেনের খামারবাড়ি থেকে সামনের একটু অংশ মূলত আমার এলাকায় পড়েছে। শুনেছি এখানে অবৈধ পার্কিং রাখা হচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো এবং তাদের সেখান থেকে উঠিয়ে দেবো। তবে আমার অংশের বাইরে ওই অংশটা মোহাম্মদপুর জোনে পড়েছে। এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক সহকারী পুলিশ কমিশনার কে এম শহীদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘ধানমন্ডি-২৭-এ আড়ংয়ের সামনে থেকে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি মোহাম্মদপুর জোনের মধ্যে পড়েছে। সচরাচর এটুকু সাইকেল লেন সবসময় ক্লিয়ার থাকে। তবে তেজগাঁও জোন এলাকায় অব্যবস্থাপনা থাকতে পারে। বিষয়টি তেজগাঁও জোন এসি ট্রাফিককে জানিয়ে দেবো।’

তবে লেনের ভেতরে যে ট্রাফিক পুলিশ বক্স, সে বিষয়ে পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা কোনও মন্তব্য করেননি।