রমনা পার্কের উল্টোপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক নম্বর গেট। পাশের ফুটপাতে বসে আছেন বৃদ্ধ খোকন মিয়া। বয়স সত্তরের কাছে। পরনে মলিন চাদর। চোখে পানি। গায়ে জ্বর। শীতে কাঁপছিলেন। কুমিল্লা থেকে আসা খোকন মিয়া শীত এলেই শ্বাসকষ্টে ভোগেন। গত চারদিন ধরে আবার শুরু হয়েছে মরণ যন্ত্রণা। একটু গরম পোশাক পেলে সুস্থবোধ করেন। এবার ভাগ্যে জোটেনি সেটা।
পাঁচ বছর হলো ঢাকায় এসেছেন। তখনও স্ত্রী বেঁচে ছিল। দুই মাস অন্তর অন্তর একদিনের জন্য বাড়ি যেতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বাড়িতে আর মন টানে না তার। অসুস্থ বোধ করায় সারাদিন এক জায়গায় বসেই ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। সেদিন পেয়েছেন ১০০ টাকা। তারপরও কিছু কিনে খাননি। জ্বরের চোটে উঠে কোথাও যাওয়ারও শক্তি নেই।
খোকন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শরীরটা খুব খারাপ। আবার শীত। শ্বাসকষ্টে আর ঠাণ্ডায় শুতে পারি না। সারারাত বসে থাকি। সকালে সূর্য উঠলে তখন একটু ঘুমাতে পারি।’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের সঙ্গে ফুটপাতে আরেকজনকে পাওয়া গেল। নাম জাফর। তারও বয়স ৭০-এর কাছাকাছি। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে এসেছেন। ঢাকার ফুটপাতে ঘুমান গত ১০ বছর ধরে। দিনে রাস্তায ঝাড়ু দেন। একে-ওকে সাহায্য করেন। রাতে নিজেই রান্না করে খান।
জাফর আরও বললেন, ‘আমার পাশে যে ঘুমাচ্ছে। ওর নাম তফির। গরম কাপড়ের অভাবে মশারি জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আজ দুজন মিলে কম্বল কিনতে গিয়েছিলাম। যে দাম! কিনতে পারিনি।’
২০০৮ সাল থেকে পথবাসী মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা সাজেদা ফাউন্ডেশন বলছে, শুধু ঢাকাতেই ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ঘরহীন মানুষ বাস করে। যাদের বয়স ৫ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। শীত-বৃষ্টি, জন্ম-মৃত্যু সব ফুটপাতেই। কারও স্থায়ী নিবাস নেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে।
কোনও সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শরীফ জানান, ‘প্রত্যেক শীতে কমবেশি সাহায্য আসতো। এবার পাইনি। খুব কষ্ট করে আছি। মাঝরাতে ঠকঠক করে কাঁপি।’
শুধু এসব এলাকাই নয়, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ডসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে এসব ঘরহীন মানুষগুলোর শীতে দারুণ অসহায় রাত কাটছে। গাড়ির হর্ন, মানুষের শব্দে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না। শুধু শীতে চাই এক টুকরো গরম কাপড়।