হারেনি ‘দীপনপুত্র’ রিদাত

বাবা-মায়ের সঙ্গে রিদাত

গত ১ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষার আগেরদিন আর দশটা ছেলের মতোই মন দিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল রিদাত ফারহান। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় তার পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যায় পিতা প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের মৃত্যুর খবরে। নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই ছাপানোর কারণে গত ৩১ অক্টোবর দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে প্রকাশক দীপনকে।

আজ রিদাতের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। জিপিএ ৪ দশমিক ৮৮ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে রিদাত ফারহান।

রিদাতের পরীক্ষার আগের দিন বাড়িতে আকস্মিক মৃত্যুশোক, পুলিশ, সাংবাদিক আর পরিচিতজনদের উপচে পড়া ভিড়। মোটামুটি সবাই ধরেই নিয়েছিল আগামীকাল রিদাত পরীক্ষা দিচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষা যে বাড়ির রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই বাড়ির মানুষগুলো নিজেদের বুকে পাথরচাপা দিয়ে ১৩ বছরের সন্তানটিকে সেদিন পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছিল।

দীপনের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রাজিয়া রহমান জলি শোককে শক্তিতে পরিণত করে ছেলেকে জেএসসি পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছিলেন। মৃত্যু, হাজার সাংবাদিক, কুলখানি সবকিছুর ভিড়েও ছেলেটির পাশে থেকে রাজিয়া তাকে পড়িয়েছেন। হার না মানা মা আজ সন্তানের ফল বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

রিদাত ফারহান

আজ রাজিয়া রহমানের পাওয়ার দিন তবু আনন্দের সঙ্গে পালন করতে পারছেন না। চাপা কষ্ট গুমড়ে উঠছে চারপাশে। রিদাত হয়তো এ+ পেতো যদি বাবা প্রতিদিন পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেত। ৩১ অক্টোবরে দীপনের খুব তাড়াতাড়ি ফেরার কথা ছিল রিদাতের পরীক্ষার জন্য। ছেলেকে নিয়ে শেষবেলা একবার ঝালিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। কিছুই হয়নি। দুর্বৃত্তদের নির্মমকাণ্ডে তাকে ছেড়ে যেতে হয়েছে সবাইকে। তবে দীপন যেমন অকুতোভয় ছিলেন, তার সন্তান ও পরিবার ব্যতিক্রম হয়নি। একদিন সবাইকে ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে রিদাত ফারহান। বাবাকে হারানোর কষ্ট আর শোককে শক্তিতে পরিণত করার ক্ষমতা নিয়েই বড় হয়ে উঠবে ছেলেটি-এমন প্রত্যাশাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের।

/এফএএন/