কেবল লকডাউনেই কমবে সংক্রমণ!

দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৮ জন। এখন পর্যন্ত মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮১৯ জন। গত কিছুদিন ধরেই করোনায় শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

দেশে মার্চ মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৪ হাজার ৪৯৪ জনের। এপ্রিলের ১০ দিনেই শনাক্ত ৬১ হাজার ১৭৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যের বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, এক সপ্তাহে (৪ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল) শনাক্ত হয়েছে ৪৮ হাজার ৬৬০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪৪৮ জনের এবং সুস্থ হয়েছে ২২ হাজার ৬০৩ জন।

করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করেছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেড মিলছে না, আইসিইউর জন্য হাহাকার লেগে আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে।

সংক্রমণ ঠেকাতে ২৯ মার্চ ১৮ দফা নির্দেশনা দেয় সরকার। ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনের পর আবার ১৪ এপ্রিল এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে, দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’-এর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটি বলছে, পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনই সংক্রমণ বন্ধের অন্যতম উপায়। যখন পাবলিক মুভমেন্ট অনেক বেড়ে যায়, তখন সংক্রমণ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়। তাই লকডাউন লাগবেই। পাশাপাশি রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন ও রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করাও জরুরি।

জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৮ দফা নির্দেশনা মানুষ মানছে না। এ কারণেই কমিটি দুই সপ্তাহ লকডাউনের সুপারিশ করেছে।

অধ্যাপক ড. সহিদুল্লা বলেন, বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার এলাকাগুলোয় এ লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে এসব এলাকায় সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবারও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

ভাইরাসের ট্রান্সমিশন বন্ধ হওয়ার অন্যতম পথ হচ্ছে লকডাউন। এমন মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা প্রয়োজন। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করলেও সংক্রমণ ছড়াবে।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা এবং মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এর আগে যেসব এলাকায় লকডাউন দেওয়া হয়েছিল তাতে দেখা গেছে, সেখানে সংক্রমণ বাড়তে পারেনি। লকডাউনের ফলে যদি সবাই ঘরে থাকে তবে সংক্রমণ কমবেই।

একই কথা জানিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, যদি প্রকৃতপক্ষেই কঠোর লকডাউন মানতে পারি, তবে সংক্রমণ কমবেই। এটা প্রমাণিত সত্য।