করোনায় শ্রমিকরা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে: সিপিডি

করোনার মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। শনিবার (১৭ এপ্রিল) ‘করোনা-কালে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা: কতিপয় প্রস্তাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনার এই সঙ্কটকালীন সময়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা এবং আলোচনার ফলে শ্রমিকদের এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের পক্ষে ঝুঁকি মোকাবেলা এবং সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সীমিত সাফল্য নিশ্চিত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের আগ্রহ নিশ্চিত করার বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা এবং একটি যৌথ বিবৃতি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

সংলাপে শ্রমিক নেতা আমিনুল হক আমিন বলেন, ‘গত বছর কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলি। শ্রমিকদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সেখানে আমরা ন্যূনতম ৮ হাজার টাকার সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে দাবি জানাই, কিন্তু বিজিএমইএ সভাপতি সেখানে মাত্র তিন হাজার টাকা করে শ্রমিকদের জন্য সহায়তা চান। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জার্মান সরকার এবং বায়ারদের পক্ষ থেকে সহায়তা এসেছে শ্রমিকদের জন্য, কিন্তু শ্রমিকদের সহায়তার জন্য সেখানে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা হয় না। অথচ শ্রমিক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই অর্থসহায়তা আসলো, এটা দুঃখজনক।’

শ্রমিকনেতা হামিদা হোসেন বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের মধ্যে পোশাক কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শ্রমিকদেরকে কারখানায় আনার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে, কিন্তু কারখানা মালিকরা অধিকাংশই পরিবহনের ব্যবস্থা করেননি। এতে শ্রমিকরা দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে কারখানামুখি হচ্ছেন। তাদের মধ্যে শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব নেই, একসঙ্গে অনেকেই পায়ে হেঁটে আসছেন, এতে তাদের কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, প্রতিটি শ্রমিককে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে শ্রমিকদেরকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

সংলাপের বিশেষ অতিথি শ্রমসচিব কে এম আব্দুস সালাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি শুধু আমাদের দেশের একার না, এটা একটা বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী অনেক দক্ষতার সঙ্গে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, যা বিশ্বে সমাদৃত। আমরা প্রতিটি আলোচনায় কারখানা মালিক এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একসঙ্গে বসে প্রতিটা শ্রমিক প্রতিনিধিকে আমরা রাখতে চেষ্টা করি এবং রাখি। এরপরও যদি আমাদের বলা হয় শ্রমিক প্রতিনিধিরা প্রোগ্রামগুলোতে উপেক্ষিত হন তাহলে কষ্ট লাগে। আজ আমরা যখন এখানে আলোচনায় অংশ নিচ্ছি ঠিক একই সময়ে খুলনাতে ৩০০ শ্রমিকের মাঝে রিলিফ দেওয়া হচ্ছে।’
সিপিডির বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ এর কোষাধ্যক্ষ এবং এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও বিলসের মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান সংলাপে বক্তব্য রাখেন।
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পটিয়াইনন সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।