একে বলে ‘লকডাউন-টেকনিক’

রিকশাচালক বুলবুল মিয়া ফুটপাতে একটু জিড়িয়ে নিচ্ছিলেন। লকডাউনের মধ্যে কেন বের হয়েছেন– প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের আর লকডাউন। পরিবারের (স্ত্রী) কাজ নাই, ছাড়ায়ে দিছে। ঘরে ছয়টা পেট। আমার ছিল ফুটপাতে কাপড়ের দোকান। ১০ দিন হয় বন্ধ। খাব কী? আমার কী ব্যাংকে টাকা আছে? তারপরও ভাইরাস জীবন নিয়ে নিচ্ছে।’ না বাঁচলে খেয়ে কী হবে– প্রশ্ন করলে বলেন, ‘মরলে মরে যাই। কিন্তু ঘরে খাবার নাই, এটা দেখতে দেখতে মরা যাবে না। কোনোদিন রিকশা চালাই নাই। দোকান খুলতে দেয় না, তাই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি।’

পেশা বদলে ফেলেছেন নুরু মিয়াও। চটপটিসহ নানা রকমের খাবারের ভ্যান ছিল তার। নুরু মিয়া এখন ভ্যানে মালামাল টানেন। শারিরীক শ্রম বেশি হয় বলে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে ঘরের পাঁচ জন খেয়ে পরে ঘুমাতে যেতে পারছেন। ভ্যানে কী নেন–জানতে চাইলে বলেন, ‘সব নিই।’ রাস্তায় ধরে না? থামায়, ‘জিজ্ঞেস করলে বলি কাওরানবাজার যাবো। যাই থাকুক কাওরান বাজার বললে ঝামেলা নাই। এটা লকডাউন-টেকনিক।’

লকডাউনের মধ্যে পেশা বদলে বেঁচে থাকার চেষ্টা

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গতবার অনেক সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু এবার কেউ কিছু দেয়নি এখনও। আমি তো ঢাকার ভোটার না, তাই নাকি পাবো না।’

করোনার সংক্রমণ কমাতে বারবার ঘরে থাকার কথা বলেও কর্মজীবী মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আলোচনা শুরু হয়েছে জীবন আগে না জীবিকা?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (আইএসএস) করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর জানায়, ঢাকার ১৭টি থানা এলাকার করোনা রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে। এরমধ্যে রূপনগর ও আদাবরে শনাক্ত রোগী সবচেয়ে বেশি। এই দুই এলাকা ঘুরে মানুষজনের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতাও বেশি দেখা গেছে। নিম্নআয়ের মানুষদের রাস্তায় বের হওয়া, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সতর্ক না থাকায় সংক্রমণ বাড়ছে।

সপ্তাহজুড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য এলাকায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও রূপনগর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী এলাকায় লকডাউন মানছেন না সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। বেলা ৩টার পর যখন চলাচল পুরো বন্ধ হওয়ার কথা তখন থেকে বেকাকেনা চলছে বেশি। এসব এলাকায় ইফতারের দোকান সাজানো কেনাকাটা ও চলাচল তখন পুরোপুরি শুরু হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি দেখা গেলে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি না থাকলে ইচ্ছে মতোই চলছে সাধারণ লোকজন। প্রচুর রিকশা এবং ফুটপাত জুড়ে ছোট ছোট ছাপড়া দোকান।

লকডাউনের মধ্যে পেশা বদলে বেঁচে থাকার চেষ্টা

লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে প্রাথমিকভাবে প্রতি ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। সংস্থার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এই টাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। দক্ষিণ থেকে এখনও কোনও ঘোষণা আসেনি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই লকডাউনের সময় বাসায় থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে করোনার ঊর্ধ্বগতি কমানো যাবে না। খাবারের জোগান নিশ্চিত করা না গেলে নিম্নআয়ের মানুষকে কোনোভাবেই ঘরে রাখা যাবে না।’