আসছে ‘ইয়াস’: আবার রক্ষা করবে সুন্দরবন!

২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ যখন আঘাত হেনেছিল, তখন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল সুন্দরবন। এর থেকে যত পেছনের দিকে হাঁটা যায় দেখা যাবে, বারবার এই দেশকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। এই বন বাংলাদেশের মানুষ ও সম্পদ রক্ষার ঢাল হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এটি আগেও বেশ কয়েকটি ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রমাণিত হয়েছে।

যতবারই ভয়াবহ পূর্বাভাস জানানো হয়েছে, প্রত্যেকবার হতাহত, ক্ষয়ক্ষতি সবকিছু থেকেই রক্ষা করেছিল এই ম্যানগ্রোভ বনটি। আগলে রাখতে, রক্ষা করতে গিয়ে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আন্দাজ করা হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ থেকেও বাংলাদেশকে রক্ষা করবে সুন্দরবন।

দিন দশেক আগে প্রথম এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আভাস দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল উল্লেখ করে দুর্যোগ এনালিস্ট ও শিক্ষক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ‘এখন পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য প্রায় সব আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্র বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কথা পরিষ্কারভাবেই বলছে। সব মডেলই বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ মে মধ্যরাত থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মডেল মনে করছে ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি। তবে বাকি সব মডেলই (আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি) বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশের ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। মানে আম্পানের লাইন ধরে আঘাত হানতে পারে।’

‘ইয়াস’ কি সুন্দরবন হয়ে আসবে?

অবস্থান বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পূর্বাভাস বলছে, নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তাহলে সেটা বুধবার (২৬ মে) দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আঘাত হানা শুরু করতে পারে।

এখন পর্যন্ত ভারতের ঊড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে বলা হচ্ছে। আর তা যদি হয় তবে বাংলাদেশের সুন্দরবনেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

ঝড় ঠেকাতে বনের ভূমিকা

২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আঘাত করার পরপরই তার তীব্রতা কমে যায়। ধীরে ধীরে এটি সাইক্লোন থেকে গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। তবে এর আগে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা আরও একটু কমে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ২৬০ কিলোমিটার বেগে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল। তবে সুন্দরবন না থাকলে এই ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতো।

একইভাবে, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করেছিল।